টিউশন ফি এখন ‘শাঁখের করাত’,সরকারের হস্তক্ষেপ চান অভিভাবকরা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

টিউশন ফি এখন ‘শাঁখের করাত’,সরকারের হস্তক্ষেপ চান অভিভাবকরা

এম এইচ রবিন : মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে, নিশ্চয়তা নেই। বন্ধ প্রতিষ্ঠানে কত দিন বেতন দিতে যেতে হবে, এমন প্রশ্ন অভিভাবকদের। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ে চাপ না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এই সময়েও শিক্ষা ফি আদায় করছে, তাগাদাও দিচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীদের থেকে ফি আদায় করতে না পারায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে পারছে না। অনেক অভিভাবকের দাবি, যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা নেই তাই কয়েক মাসের টিউশন ফি মওকুফ করা হোক। প্রয়োজনে সরকার প্রণোদনা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সমস্যা সমাধান করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা বলছেন, টিউশনের ফি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। গণহারে সবার ফি মওকুফ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় টিউশন ফি শব্দটাই এখন শাঁখের করাতে পরিণত হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের কারণে সব শ্রেণিপেশার মানুষ কমবেশি সমস্যায় পড়েছে। আর্থিক সমস্যায় আছেন অভিভাবকরাও। সন্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে পড়াশোনার ক্ষতি, অন্যদিকে আর্থিক সংকট। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আর কত দিন বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন দিতে হবে? অভিভাবকদের প্রশ্ন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন আদায় ইস্যুতে সরকারের অবস্থান নিয়েও ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবকদের ত্রিপক্ষীয় সমাধান হওয়া উচিত মনে করেন অনেক অভিভাবকরা।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবক উভয়ে সংকটে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সময়ে একটু মানবিক হতে হবে। শিক্ষার্থীর টিউশন ফি আদায়ে চাপ দেওয়া যাবে না। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের ফি মওকুফ করার উদ্যোগ নেয়। অভিভাবকরাও সহনশীল হবেন, তাদের দেওয়া টিউশন ফির টাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যয় নির্বাহ করতে হয়।

এ প্রসঙ্গে উত্তরা একটি অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, আমরা মাসের পর মাস টিউশন ফি দিয়ে যাচ্ছি। আর কত দিন এভাবে চলবে কেউ জানি না। সরকারের একটা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসা জরুরি। একদিকে সরকার বলবে টিউশন ফি আদায়ে চাপ দেওয়া যাবে না, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো দিনের পর দিন নোটিশ করে যাচ্ছে ফি পরিশোধ করতে। সরকার, স্কুল কর্তৃপক্ষ আর অভিভাবকরা ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় একটা সমাধানের পথ খোঁজা দরকার।

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, সরকার চাইলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি আদায় বন্ধের সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক কর্মচারী আছেন, তাদের রুটিরুটির বিষয় জড়িত। আবার একটা সিদ্ধান্ত যদি দেওয়া হয়, এত শতাংশ বেতন আদায় করা হোক। তাও সবার জন্য এক সিদ্ধান্ত দেওয়া মুশকিল। সব প্রতিষ্ঠান সব অভিভাবকের সামর্থ্য এক রকম নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী ফি আদায়ে চাপ না দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া জানান, অনেক শিক্ষার্থীর গত ৫ মাসের বেতন বকেয়া হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে মানবিক বিবেচনায় গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে দুই মাসের বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জানান, তারা চাপ দিচ্ছেন না। শুধু টিউশন বকেয়া পরিশোধ করতে বলেছেন। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম বলেন, অনেক অভিভাবক বিগত ৬ মাস ধরে টিউশন ফি আদায় করেননি। শিক্ষার্থীদের ভর্তি-টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়। আমরা কাউকে চাপ সৃষ্টি করছি না, যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে, তবে ঢালাওভাবে অর্থ মওকুফ করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত স্কুলসহ সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী প্রায় পৌনে ২ কোটি। সরকারি বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৬২০টি। বাকিগুলো বেসরকারি। মাধ্যমিকে মোট প্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৬৬০টি। এর মধ্যে সরকারি মাত্র ৬৭৫টি। বাকি ১৯ হাজার ৯৮৫টি বেসরকারি। মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩৪ লাখের বেশি। সরকারি ও বেসরকারি কলেজ আছে ৪ হাজার ৫৫১টি। এর মধ্যে বেসরকারি কলেজ ৩ হাজার ৯০০টি। কলেজে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪৪ লাখ। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৫টি। এর বাইরে কয়েক হাজার ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

Comment here