নগদ টাকার সংকট মেটাতে ডলার অদল-বদল সুবিধা চালুর পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তার সদ্ব্যবহার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশের ১২টি বেসরকারি ব্যাংক এ সুবিধার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ৫৮৮ মিলিয়ন ডলারের কারেন্সি সোয়াপ করেছে। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এদিকে কারেন্সি সোয়াপ সুবিধা চালুর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৫৭ কোটি ডলার। কারণ সোয়াপের ডলার রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। গত সোমবার দিন শেষে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টাকা-ডলার অদল-বদল পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার-টাকা অদল-বদল করতে পারছে। এ পদ্ধতিতে টাকা বা ডলার জমা রেখে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য বিপরীত মুদ্রা নিতে পারবে ব্যাংক। যে মুদ্রা নেওয়া হবে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সেই মুদ্রা ফেরত দিতে হবে। মুদ্রার অদল-বদলের জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য সুদ পাবে একটি পক্ষ। প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ক্ষেত্রে টাকার নীতি সুদহার রেপো এবং ডলারের বেঞ্চমার্ক রেট সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (এসওএফআর) মধ্যে যে পার্থক্য থাকবে সে পরিমাণ সুদ পাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত দেশের ১২টি ব্যাংক ৫৮৮ মিলিয়ন ডলার কারেন্সি সোয়াপ করেছে। ৩০ মেয়াদে এই সোয়াপ হয়েছে। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩০ দিন শেষ হলেই ব্যাংকগুলো এই টাকা ফেরত দিয়ে ডলার নিয়ে যাবে। মূলত যাদের রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তারাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ১১০ টাকা দরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনছে। এই দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার অদল-বদল করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ টাকা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বেশ কিছু ব্যাংক ডলার জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে। মূলত যাদের রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তারাই সোয়াপ করতেছে। আবার যেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে তারাও সোয়াপ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, টাকা-ডলার অদল-বদলের এ ব্যবস্থা উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক। কারণ, উদ্বৃত্ত ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পেয়ে যাবে। আবার নির্ধারিত সময়ের পর টাকা ফেরত দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার পেয়ে যাবে। এ ব্যবস্থার আওতায় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার বা তার সমপরিমাণ টাকা অদল-বদল করা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরেই ডলার ও টাকার সংকটে ভুগছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে ডলার হোল্ডিং বেশি থাকলেও টাকার সংকট রয়েছে। আবার কারও কাছে নগদ অর্থ রয়েছে কিন্তু ডলার সংকট রয়েছে। এ রকম ক্ষেত্রে যার কাছে যে মুদ্রা থাকবে সাময়িক সময়ের জন্য বিপরীত মুদ্রা নিতে পারবে। তুলনামূলক কম সুদ ও সহজ শর্তে অদল-বদল সুযোগের কারণে বাজারে তারল্য সংকট কমতে পারে।
এদিকে ব্যাংকগুলো ডলার জমা দিয়ে টাকা ধার নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ২০ ফেব্রুয়ারি বেড়ে হয় ২০ দশমকি ১৯ বিলিয়ন ডলার। গত সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ আরও বেড়ে হয় ২০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
Comment here