সারাদেশ

ডিম তো আমিও খেয়েছি,খালি ওদের ওপর নয় : ঢাবি প্রাধ্যক্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে গত সোমবার রাতে হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার ও হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন হল সংসদ নির্বাচনে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ হাসান। তার কপালের ডান পাশ ও ডান কানে মোট ৩২টি সেলাই পড়েছে।

এ ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ফের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ এনেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, ডাকসুতে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান ও ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ বেশ কয়েকজন।

এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নুর ও আখতারসহ তাদেরকে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এছাড়াও বেনজিরের অভিযোগ, পেটে লাথির আঘাত পেয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অরণির অভিযোগ, পেছন থেকে তাকে লাথি ও ঘুষি মারা হয়। ইমির অভিযোগ, তাকেসহ অন্যদের লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছে।

এ সময় নিজের গায়েও ডিম লেগেছে বলে এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে বাইরে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তখন খালি ওরা না, ধাক্কাটা আমিও খেয়েছি। খালি ওদের ওপর ডিম মারেনি। ডিম তো আমিও খেয়েছি।’

আজ বুধবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার পর সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগামী সোমবারের মধ্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, নয়তো শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।’

নুর আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আন্দোলন এবং সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনের সময় প্রত্যেকটি হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই বার্তাটি দিতে চেয়েছিলাম যে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এরা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা চালাচ্ছে।’

এ সময় শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, ‘এসএম হলে আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক আচরণ করা হয়েছে। এর বিচার না হলে চরম মূল্য দিতে হবে।’

আহত ফরিদ হাসান বলেন, ‘ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

এসএম হলের এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত নয় জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে ডাকসুর নির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এসএম হলে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কারণ খুঁজতে ইতিমধ্যে হল থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে এবং হল সংসদ এসব বিষয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কাম্য নয়। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অবশ্যই আমার সমর্থন থাকবে।’

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারকে দুপরে ফোনে বলেন, ‘হলের ভেতর নুর, আখতারেরা অবরুদ্ধ ছিলেন বলে আমার মনে হয়নি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তারা অবরুদ্ধ রয়েছেন কী-না, তবে তারা কোনো উত্তর দেননি।’

এ ঘটনায় হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে  কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, ‘হলের মূল ফটকে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি সেটিও যাচাই করে দেখবে।’

তবে, এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।

Comment here

Facebook Share