নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া মৃত, প্রবাসী ও বন্দি ভোটাররা ‘ভোট দিয়েছে’ অভিযোগ করে চট্টগ্রাম-৮ আসনে পুনর্নির্বাচন চেয়েছে দলটি। গতকাল বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনে কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল।
এ সময় সিইসির কাছে চিঠিটি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের হাতে এখনো সুযোগ আছে নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করা। সেই লক্ষ্যে ইভিএমের অকার্যকারিতাকে বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যবস্থা বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট ব্যবস্থাতে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করুন। ইভিএমকে ‘একটি সর্বজন বিতর্কিত উদ্যোগ’ আখ্যায়িত করে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে এ মেশিনের অকার্যকারিতা উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয়, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। তার দল এই আসনের ভোট বাতিল করে ব্যালট পেপারে পুনর্নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। যারা যেতে পেরেছে তারা আঙুলের ছাপ দিয়েছে, ভোটের ব্যালট ইউনিটে ভোটের কাজ অন্যরা সেরে ফেলেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানেও এমন হয়েছে, চট্টগ্রামে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশন বলছে সব ঠিক আছে। আগে ৩০ ডিসেম্বরেও বলেছিল সব ঠিক আছে, এখনো তা-ই বলছে।
তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ঢাকার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে বলে মনে করি। কমিশনের ওপর সব আস্থা হারিয়ে ভোট ব্যবস্থা চলছে।
বিএনপির সঙ্গে কমিশনের বৈঠক প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, তারা কিছু অভিযোগ করেছেন। চট্টগ্রামের নির্বাচন নিয়ে তাদের অভিযোগের কথা জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, গেজেট হয়ে গেলে সাধারণ অভিযোগগুলো কমিশনের হাতে থাকে না। এ বিষয়ে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
মৃত বা প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, বিএনপিকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা দিয়েও গেছেন। সেখানে যদি আমরা দেখি, প্রকৃতপক্ষেই মৃত এবং তার পক্ষে কেউ ভোট দিয়ে গেছে, তা হলে অবশ্যই বুঝতে হবে, সিস্টেমের কোথাও সমস্যা আছে। ইভিএম তো দোষ করতে পারে না। তা হলে এই দোষের সঙ্গে জড়িত কারা। কমিশন বলেছে, এটার সত্যতা তারা বের করবে।
তাবিথের ওপর হামলার বিষয়ে ইসির সচিব বলেন, বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়নিÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব থাকে। এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে সেনাবাহিনীকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
২০১৫ সালের নির্বাচনে ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছিল। এবার তাদের কোনোভাবে রাখার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠপর্যায়ে দৃশ্যমান ননÑ এমন অভিযোগের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আমরা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। তারা বলেছেন, ম্যাজিস্ট্রেটদের তারা দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছেন।
Comment here