ঢাকা উত্তর সিটির কাউন্সিলর রাজীব গ্রেপ্তার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

ঢাকা উত্তর সিটির কাউন্সিলর রাজীব গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)। সন্ত্রাসবাদ, দখলদারিত্ব এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে ৮ নাম্বার সড়কের ৪০৪ নাম্বার ওই বাসা ঘেরাও করে র‌্যাব-১। জানা গেছে, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন রাজীব।

আমাদের সময়কে রাজীবের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরার ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’

এ ছাড়া র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িংয়ের সহকারী পরিচালক (এএসপি) মিজানুর রহমানও রাজীবকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘রাজীবকে আটক করা হয়েছে। যে বাসা থেকে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেখানে তল্লাশী চালানো হচ্ছে।’

মোহাম্মদপুর-বসিলা-ঢাকা উদ্যানসহ আশেপাশের এলাকার অঘোষিত সম্রাট তারিকুজ্জামান রাজীব দিনমজুর থেকে চাঁদাবাজি ও দখলের টাকায় ধনকুবের হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে থাকেন রাজীব। এই কয়েকবছরেই যুবলীগের এই থানা পর্যায়ের এই নেতা মালিক হয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকার।

প্রায় ছয় বছর আগে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির একটি বাড়ির নিচতলার গ্যারেজের পাশেই ছোট একটি ঘরে সস্ত্রীক ভাড়া থাকতেন রাজীব। ভাড়া দিতেন ছয় হাজার টাকা। তবে ছয় বছর শেষে একই হাউজিং এলাকায় নিজের ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকেন। নামে বেনামে অন্তত ছয়টি বাড়ি রয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকায়।

রয়েছে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্পত্তি। ছয় বছর আগে একমাত্র বাহন অল্পদামি একটি মোটরসাইকেল থাকলেও ছয় বছর শেষে কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি। কিছুদিন পর পরেই পরিবর্তন করেন গাড়ির ব্রান্ড। যেখানেই যান, তার গাড়িবহরের সামনে-পেছনে থাকে শতাধিক সহযোগীর একটি দল। নিজের সংগ্রহে রয়েছে মার্সিডিস, বিএমডাব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডাব্লিউ স্পোর্টস কারসহ নামিদামি সব ব্র্যান্ডের গাড়ি।

সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করেই আয় গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য। রাজীবের সব অপকর্মের সঙ্গী যুবলীগ নেতা শাহ আলম জীবন, সিএনজি কামাল, আশিকুজ্জামান রনি, ফারুক ও রাজীবের স্ত্রীর বড় ভাই ইমতিহান হোসেন ইমতিসহ অর্ধশত ক্যাডার। অভিযোগ রয়েছে রাজিবের নির্দেশেই যুবলীগ কর্মী তছিরকে হত্যা করে ঘনিষ্ঠরা।

২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বিভিন্ন কারসাজি করে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারান। অভিযোগ রয়েছে এরপর থেকেই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করছেন না তিনি।

জানা যায়, মোহাম্মদপুর এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি দিয়েই শুরু হয় রাজীবের রাজনৈতিক জীবন। মাত্র এক বছরের রাজনীতি করেই বাগিয়ে নেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ। এই পদ পেয়েই থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতা পিটাসহ লাঞ্ছিত করেন। সে সময় যুবলীগ থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, তারিকুজ্জামান রাজীব মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে উল্টো ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বনে যান। কেন্দ্রীয় যুবলীগের আলোচিত দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমানকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে এ পদ কেনেন রাজীব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাউন্সিলর নির্বাচন করার আগে রাজনীতির পাশাপাশি এক চাচাকে কাজকর্মে সহযোগিতা করতেন। ওই চাচা ঠিকাদারি করতেন। নির্বাচনের সময় তার ওই চাচা একটি জমি বিক্রি করে ৮০ লাখ টাকা দিয়ে তাকে কাউন্সিলর নির্বাচন করতে সহযোগিতা করেন। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এখন ওই চাচার সঙ্গেও যোগাযোগ নেই।

মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নাম্বার সড়কের ৩৩ নাম্বার প্লটে রাজীবের ডুপ্লেক্স বাড়ি। জানা গেছে, পাঁচ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি করতে খরচ হয়েছে ছয় কোটি টাকা। এর বাইরে রহিম ব্যাপারী ঘাট মসজিদের সামনে আব্দুল হক নামের এক ব্যক্তির ৩৫ কাঠার একটি প্লট যুবলীগের কার্যালয়ের নামে দখল, ওই জমির পাশেই জাকির হোসেনের সাত-আট কাঠার একটি প্লট দখল করেছিলেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশের ময়ূর ভিলার মালিক রফিক মিয়ার কয়েক কোটি টাকা দামের জমি দখল, পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে জমিটি দখল করা হলেও সেখানে পাঁচটি দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন রাজিব।

ঢাকা রিয়েল এস্টেটের ৩ নাম্বার সড়কের ৫৬ নাম্বার প্লট, চাঁদ উদ্যানের ৩ নম্বর রোডের রহিমা আক্তার রাহি, বাবুল ও মো. জসিমের তিনটি প্লটসহ অন্তত দশটি প্লট দখল করেছেন তিনি।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে আল্লাহ করিম মসজিদ ও মার্কেটের নিয়ন্ত্রণও রাজীবের হাতে। অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, বসিলা এলাকার পরিবহনে চাঁদাবাজি রাজীবের নিয়ন্ত্রণে। অটোরিকশা, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বাস থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলে তার লোকজন। পাঁচ বছর ধরে এলাকার কোরবানির পশুর হাটের ইজারাও নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন রাজীব।

Comment here