নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকার সঙ্গে রাজশাহীর বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও পরিবহন মালিকদের সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজধানীর সঙ্গে বিভাগীয় শহরটির বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এ ঘোষণা কার্যকরও করেছে তারা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা থেকে রাজশাহী এবং রাজশাহী থেকে ঢাকার মধ্যে কোনো বাস চলাচল করবে না।’ তবে উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে ঢাকার সঙ্গে।
এ ছাড়া রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্র থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তারও বিষয়টিও আমরা ভেবে দেখেছি। তারা যেহেতু প্রতিদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুঁটে বেড়ায় এবং দুদিন পর পরিবারের সাথে হয়তো একদিন কাটায়। ফলে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা থেকে যায়। আমরা মনে করি, যাত্রীবাহী বাস বন্ধ রাখলে জনসমাগম অনেকটাই কমে যাবে।’
আজ দুপুর ২টার পর থেকে কোনো বাস ঢাকা বা দেশের অন্যান্য স্থানের উদ্দেশ্যে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায়নি। রাজশাহী থেকে ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, চট্টোগ্রামসহ বিভিন্ন রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ওষুধ, কাঁচামাল, মুদি দোকান বাদে সব দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে মরণঘাতী করোনাভাইরের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন (অবরুদ্ধ) করাই একমাত্র উপায় বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তাই পরিস্থিতি বুঝে দেশের বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করার চিন্তা করছেন তিনি। বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। আর ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ জন।
প্রবাসীদের আগামন ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি এলাকা লকডাউন করার কথা ভাবছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ তালিকায় প্রথম রয়েছে মারাদারীপুর। এরপর আরও কিছু এলাকার কথা তুলে ধরেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাদারীপুর, ফরিদপুর ও শিবচর এলাকায় বেশি করে (প্রবাসী) দেখা যাচ্ছে। যদি পরিস্থিতির অবনতি ঘটে তাহলে আমরা লকডাউনের দিকে যাব। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৭ জন রোগীর মধ্যে বেশিরভাগ মাদারীপুর এলাকার, সেখানে কোয়ারেন্টিনে বেশি আছে বলে খবর পাচ্ছি, ওখানকার লোক বিদেশে থাকেও বেশি। সে জন্য ওই এলাকাটা মোর ভালনারেবল অবস্থায় আছে। আগামীতে যদি সত্যি (করোনা রোগী) বেড়ে যায়, তাহলে আমরা লকডাউন করব।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীন করোনা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে লকডাউনের মাধ্যমে। অন্যান্য দেশও চীনকে ফলো করছে। আমাদের পরিস্থিতি যদি আরও অবনতি ঘটে, আমাদের কোনো এলাকা যদি বেশি আক্রান্ত হয়ে যায়, আমরা অবশ্যই সেই এলাকাকে লকডাউনে নিয়ে যাব। আরও যেখানে যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে সেখানে আমরা লকডাউনে চলে যাব। কারণ দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে করোনাভাইরাস থেকে।’
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ হাজার। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ১৪৯ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ হাজার ৭৯২ জন।
Comment here