রাজপথে কর্মসূচি শুরুর আগে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জীবিত করতে সারাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এই সফরে দেশের তরুণ সমাজকে টার্গেট করেছে দলটি। এ লক্ষ্যে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দল মাঠে নামছে।
আজ রবিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই চার সংগঠনের নেতাদের নিয়ে স্কাইপিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৈঠক করেছেন।
এতে বিএনপির তরুণ এবং টেলিভিশন টকশোতে নিয়মিত অংশ নেওয়া সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) নিলোফার চৌধুরী মনি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা,কেন্দ্রীয় নেতা শেখ রবিউল আলম রবি, শহিদুল ইসলাম বাবুল, জি নাইন সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত অংশ নেন।
গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে এটাই ব্যতিক্রমধর্মী কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া অঙ্গ সংগঠনের একজন নেতা বলেন, কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি রাজপথে নামতে চাচ্ছে। এজন্য তরুণ সমাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তরুণদেরকে কর্মসূচিতে যুক্ত করতে চার সংগঠন জেলায় জেলায় কাজ করবে। ছাত্রদল ইতোমধ্যে রাজশাহী বিভাগের জেলা ও মহানগরের কর্মীসভা সম্পন্ন করেছে। ফরিদপুরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক দল ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে কাজ শুরু করেছে। আগামী ২৪ মে থেকে কাজ শুরু করবে যুবদল। কৃষক দলও জেলা সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বৈঠক শেষে একাধিক নেতা বলেন, জেলা সফরে তৃণমূলের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া আর তাদের কষ্টের কথা শুনবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে টার্গেট করে কেন সরকারের নানা মহল থেকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেন, তার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। এর উদ্দেশ্য নেতাকর্মীরা যাতে কোনো অবস্থায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন বর্জনের যৌক্তিকতাও তুলে ধরা হবে এই সফরে।
বিএনপি একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচন বর্জনের ডাক সফল হওয়ায় তারেক রহমান আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও পরিচিতি পেয়েছে। বিএনপির নেতৃত্ব সঙ্কট নিয়ে শঙ্কা ছিল তা কেটে গেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, তারেক রহমান শুধুমাত্র বিএনপির নেতা নন; তিনি এখন সাধারণ মানুষের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সরকারের লোকজন যা-ই বলুক কাজে আসবে না।
অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ, জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমূখীসহ সরকারের দুর্নীতিসহ নানা বিষয় সামনে এনে সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হবে এই সফরে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এই সফলে বিগত আন্দোলনে গুম, খুন, পঙ্গু এবং গ্রেপ্তার নেতাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাত করা হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও বিএনপির একদফার আন্দোলন ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে এখনো বাড়িঘর ছাড়া। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও নেতাকর্মীরা নানান কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ টানা ৪ বার সরকার গঠনে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে আবারো ধারাবাহিক রাজপথের কর্মসূচিতে যেতে চায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এজন্য জনমত তৈরির পাশাপাশি জনগণকে মাঠে নামাতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল আর বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয় করতে হবে। এ লক্ষ্যে আবারও একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করতে চাইছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপির সহ-স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, সারাদেশে নির্যাতিত, নিপিড়ীত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদেরকে আরও বেশি সংগঠিত করার লক্ষ্যে জেলা সফর করছেন বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে সে বিষয়ে কথা হয়েছে।
Comment here