তারেককে ফেরাতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের আবেদন - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

তারেককে ফেরাতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের আবেদন

ঢাকা সফরররত যুক্তরাজ্যের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এ তথ্য দিয়েছেন।

রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে কথা না বলার তার সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রত্যার্পণের অনুরোধ জানিয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি রাজনীতিকদের ‘হাতে নেই’ বলে জানান ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী।

এছাড়া যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তিও নেই, যা বিষয়টিকে ‘আরও জটিল’ করেছে বলে মনে করছেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে তার দণ্ড কাযর্করের উদ্যোগ নেওয়ার কথা এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে।

তারেক একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা এবং মুদ্রা পাচারের এক মামলায় দণ্ডিত। দেশে ফিরলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা খাটতে হবে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার তারেক পরের বছর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে যান। তারপর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

‘ব্রেক্সিটের পরও সম্পর্কে ঘাটতি হবে না’

যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে ব্রেক্সিট কার্যকর করার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড।

রোববার পলিসি রিসার্চ অর্গানাইজেশন (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ বিষয়ে  ‘আত্মবিশ্বাসী’ বলে জানান তিনি।

পরে ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ফিল্ড বলেন, এর বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতায় গণতন্ত্র ব্যাহত হবে বলে অনেকের মতের সঙ্গে একমত নন তিনি।

এই ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, “একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই বরং এর উল্টোটাই সঠিক।

“সকল ক্রুটি-বিচ্যুতি নিয়েই গণতন্ত্র বহাল আছে।”

মার্ক ফিল্ড বলেন, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশও গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় শাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে গুরুত্ব দেন ফিল্ড।

দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক হবে  ইতিহাস, বাণিজ্য আর সংস্কৃতির সূত্রে।

“এখন প্রায় ছয় লাখের মতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছে, তাদের অনেকেই লন্ডনে আমার নির্বাচনী এলাকার। ব্রিটিশ জীবনযাত্রায় তাদের অবদানকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি।”

মূল নিবন্ধে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র ও নির্বাচন এবং শিক্ষা নিয়ে অভিমত জানান ফিল্ড।

ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ফিল্ড বাংলাদেশে নিজের তৃতীয় সফর নিয়ে বলেন, “এর মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।”

দুই দেশের মেলবন্ধনকে ‘শক্তিশালী ও গভীর’ করায় জোর দেন তিনি।

ফিল্ড বলেন, “দীর্ঘদিনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের নেওয়া বড় উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আগামীতে যে আরও বড় অর্জন করতে সক্ষম সে সম্ভাবনাকেও স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য।”

বাংলাদেশের এই অর্জনে যুক্তরাজ্য যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলেন জানান তিনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মার্ক ফিল্ড বলেন, “শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক হিসেবে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী দেখতে চাই আমরা।”

সরকারের কর্মকাণ্ডের একটি বিকল্প মত তুলে ধরতে সংসদে বিরোধী দলের থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ মন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, “আমরা যতটা সম্ভব অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার চেষ্টা করেছি, যেন তা আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পায়।”

তবে নির্বাচন আয়োজন করাই ‘কঠিন’ হয়ে উঠেছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

তিনি বলেন, “অনেকেই নির্বাচন কমিশনারের উপর চড়াও হন। তারপরও নির্বাচন কমিশন এমন একটি কঠিন কাজ সম্পন্ন করেছে।”

আওয়ামী লীগ সরকার ব্রিটিশ সংসদের পাশাপাশি দেশটির দুটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল কনজারভেটিক ও লিবারেল পার্টির সঙ্গেও ‘আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক’ সম্পর্ক ধরে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন এইচ টি ইমাম।

Comment here