তিন ধাপে খুলছে পোশাক কারখানা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

তিন ধাপে খুলছে পোশাক কারখানা

আব্দুল্লাহ কাফি : করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশ একমাস ধরে লকডাউনে। শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় সব উৎপাদন বন্ধ। এ অবস্থা চলতে থাকলে খাদ্য সংকট থেকে শুরু করে অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে। বিশ্বের অনেক দেশ শিল্প কারখানা, অফিস-আদালত স্বল্প আকারে হলেও খুলতে শুরু করেছে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে পোশাকশিল্প ও বস্ত্রশিল্প ধাপে ধাপে খোলার পরামর্শ দেয় দুর্যোগকালীন সময়ে গঠিত টাস্কফোর্স।

শিল্পমালিকদের সংগঠনগুলোকে তিন ধাপে শিল্প কারখানা খুলতে বলা হয়েছে। এ পরামর্শের আলোকে আজ রবিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো শ্রমিক ঢাকার বাইরে থেকে নিয়ে আসবেন না কারখানা মালিকরা।

কারখানাগুলোর আশপাশে যেসব শ্রমিক রয়েছেন, তাদের নিয়ে স্বল্পপরিসরে কাজ শুরু করবে। যাদের রপ্তানি আদেশ রয়েছে, তারাই কারখানা খুলতে পারবে। এ ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক গ্রামে থাকবেন, কাজে যোগ দিতে পারবেন- না তাদের বেতন ঈদ বোনাস নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। মোবাইলের মাধ্যমে পাওনা পেয়ে যাবেন। তাদের চাকরি অব্যাহত থাকবে। বর্তমান করোনা সংকটকালীন সময়ে গঠিত টাস্কফোর্স সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

টাস্কফোর্স সূত্র জানায়, আলোচনার ভিত্তিতে বিজিএমইএকে ২৬, ২৭ ও ২৮ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার কারখানাগুলো খুলতে বলা হয়। এর পর ২৮, ২৯, ৩০ এপ্রিল আশুলিয়া বাজার থেকে শুরু করে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত অবস্থিত কারখানাগুলো তিন ধাপে খুলবে পর্যায়ক্রমে। ৩০ এপ্রিল কাঁচপুর, রূপগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকার কারখানা খুলবে। ৩০ তারিখ থেকে ৪ মে পর্যন্ত ময়মনসিংহ পর্যন্ত কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে খুলবে।

জানতে চাইলে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান সমন্বয়ক সংসদ সদস্য ও সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী আমাদের সময়কে বলেন, কারখানা এলাকায় যেসব শ্রমিক আছেন, তারাই কেবল কারখানাগুলোয় কাজ করতে পারবেন। বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়ে কাজ করা যাবে না। যেসব শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন, তাদের কাজে যোগ দিতে হবে না।

মাস শেষে বেতন ও সামনের ঈদের বোনাস তাদের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। কারও চাকরি যাবে না। এ বিষয়ে শ্রমিকরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। পরবর্তী সময়ে পরিবেশ স্বাভাবিক হলে তারা কাজে যোগ দেবেন। তিনি বলেন, আমাদের অনেক শ্রমঘন শিল্প, তাই ধাপে ধাপে খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

টেক্সটাইল খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন আমাদের সময়কে বলেন, যাদের আবাসিক শ্রমিক আছে তারাই কেবল টেক্সটাইল খুলবেন। বাইরে থেকে শ্রমিক ডেকে আনা যাবে না। কেবল টেক্সটাইলের মধ্যে যেসব শ্রমিক আছেন তারাই কাজ করতে পারবেন। এরপর যারা কারখানার কাছাকাছি থাকেন, তারা কাজে যোগ দিতে পারবেন।

গণপরিবহন চালু না হওয়া পর্যন্ত অন্য জেলার শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করতে পারবেন না। যেসব শ্রমিক বাড়িতে আছেন, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তাদের বেতন-ভাতা বাড়িতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে। আপাতত স্বল্প আকারে খোলা হবে। তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) আবাসিক শ্রমিক দিয়ে টেক্সটাইল চালু হবে। কারণ এসব শ্রমিক বেকার, শুধু শুধু টেক্সাইলের মধ্যেই বসে আছেন।

নিট পোশাক কারখানা খোলার বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান আমাদের সময়কে বলেন, যেসব কারখানায় ১০ থেকে ১২ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়, সেগুলো প্রথম দিকে খোলা হবে। যেমন ডায়িং সেকশন, নিটিং সেকশন। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যঝুঁঁকির কোনো আশঙ্কা নেই। এগুলো এখনো চলতে পারত। বন্ধ না করলেও সমস্যা ছিল না।

একেকটা মেশিনে ১৫-২০ মানুষ কাজ করেন অনেক দূরে দূরে থেকে। তাই সমস্যা নেই। ডায়িং সেকশনে মেশিনের এপারে একজনে কাজ করেন, অন্য পারে আরেকজন কাজ করেন। অনেক দূরত্ব থাকে। তাই সমস্যা হবে না। মূলত যাদের কাজ আছে তারাই কারখানা খুলবে, আর যাদের কাজ নেই তারা এমনিতেই খুলবে না। তিনি বলেন, যেসব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারবেন না, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তারা ঘরে বসেই বেতন-ভাতা পাবেন। কোনো শ্রমিক যদি অসুস্থ হন অথবা করোনায় আক্রান্ত হন- তা হলে কারখানা মালিকরাই চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, আমরা চাই পোশাক কারখানা চালু করা হোক। তবে এ ক্ষেত্রে যারা এ বিষয়টি ভালো বুঝবেন, তাদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ হচ্ছে- ভাইরাসের কারণে সব কিছু বন্ধ। আবার খুলতে গিয়ে শ্রমিকরা যেন বিপদে না পড়ে। শ্রমিকদের সুরক্ষা দিয়েই কাজ করা উচিত।

তিনি বলেন, ক্ষতি যা হয়েছে তো হয়েছে। এখন যদি আবার ক্ষতি হয়, তা হলে সে ক্ষতি আর পোষানো যাবে না। তাই যদি খুলতেও হয় সেটা মালিকদের কথায় নয়, এ বিষয়ে যারা দক্ষ তাদের সঙ্গেঙ্গ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ আমরা এই অজানা ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানি না।

এদিকে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, অর্থনীতি বিবেচনা করলে কারখানা স্বল্প আকারে হলেও খোলা উচিত। তবে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে স্বল আকারে কম শ্রমিক নিয়ে কারখানা চালুর ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, দেশ, শিল্প, অর্থনীতি এগুলো বিবেচনায় নিতে হয়। উৎপাদন না হলে দুদিন পর সবাইকে খাদ্যাভাবে মরতে হবে। তাই যতটা পারা যায় সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করতে হবে।

Comment here