তিন বছরের প্রকল্পে ৯ বছর পর নতুন দরপত্র - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

তিন বছরের প্রকল্পে ৯ বছর পর নতুন দরপত্র

ঢাকায় যাতায়াতের জন্য রেলপথই বেশি ব্যবহার করেন পাশ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার মানুষ। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ট্রেনে চেপে ঢাকায় আসেন; কাজ সেরে আবার ফিরে যান। জনপ্রিয় হওয়ায় রেলপথটি ২০১৪ সালে ডাবল লাইন করার প্রকল্প হাতে নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু আট বছরের মাথায় এসে তিন বছরের এ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর নানা চেষ্টাতেও ঠিকাদারকে ফেরাতে না পেরে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের পথে হাঁটছে রেলওয়ে। ৯ বছরের মাথায় এসে চুক্তির অবশিষ্ট কাজসহ নতুন প্যাকেজ প্রাক্কলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও রেলওয়ের মধ্যে জমি নিয়ে চলে টানাপড়েন। একপর্যায়ে সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পড়ে উভয় সংস্থার মধ্যে জমি রদবদলের মাধ্যমে সেই অনিশ্চয়তা কাটে। এখন ঠিকাদার সরে যাওয়ায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথটি ডাবল লাইন করা আরও পিছিয়ে গেল। এই ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে প্রথমে ঘটে তুঘলকি কারবার।

প্রতিষ্ঠানটির টেন্ডার ড্রপিংকে কেন্দ্র করে খোদ রেলভবনে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির নাম মেসার্স পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেড।

গত বছরের ১৫ মার্চ চুক্তি বাতিলের জন্য রেলওয়েকে চিঠি দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর পাওনা পরিশোধের জন্য একাধিক চিঠি দেয়। চুক্তির ‘ডব্লিউডি-১’ প্যাকেজের অসমাপ্ত কাজ এবং নতুন প্যাকেজ-‘ডব্লিউডি-৩’ এক করে নকশা, সুপারভিশন ও ডিফেক্ট লায়াবলিটির সংস্থান রেখে আরএফপি ইস্যু করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে ‘ওয়ার্কস প্যাকেজ’ ছিল দুটি। এর মধ্যে ‘ডব্লিউডি-১’ প্যাকেজের আওতায় সমান্তরালে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ এবং ‘ডব্লিউডি-২’ প্যাকেজের আওতায় সিগন্যালিং কাজের সংস্থান আছে। সংশোধিত প্রকল্পে আরও দুটি কাজ যুক্ত হয়। প্যাকেজ ৩-এর আওতায় বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর এবং প্যাকেজ ৪-এর আওতায় ‘বায়ো ডিরেকশনাল সিগন্যালিং’ ব্যবস্থাকে ‘আনডিরেকশনাল সিগন্যালিং’ ব্যবস্থায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।

পূর্ত নির্মাণ প্যাকেজে পাওয়ার করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৭ সালের ১৯ জুন। চুক্তিমূল্য ২৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। কাজ শুরুর তারিখ ছিল ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের ১৫ মার্চে চুক্তি বাতিলের চিঠি দেয়। কারণ হিসাবে দাবি করে- সময়মতো পাওনা পরিশোধ হয়নি, অতিরিক্ত কাজের বিল বকেয়া এবং প্রকল্প এলাকা বুঝে না পাওয়া।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলপথটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এ পথে ১৬ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করে। সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় রেলপথটি ডাবল লাইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন ঠিকাদার কাজ ফেলে সরে গেছে। নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পটি শুরু থেকেই আলোচিত। দরপত্র নিয়ে রেলভবনে গোলাগুলি হয়। কাজ পায় ‘পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না’। এ ঠিকাদার শুরু থেকেই ধীরগতিতে কাজ করছিল। এদের কাজে অসন্তুষ্ট ছিল রেলওয়ে। তার পরও কাজ এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে মেয়াদ বাড়ানো হয়।

প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন। পরে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। সর্বশেষ অনুমোদন অনুযায়ী ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, শুরু থেকে এ প্রকল্পে ঠিকাদারের গাফিলতি ছিল। কাজ চলছিল খুবই ধীরগতিতে। কাজটি সম্পন্ন করতে গেলে লোকসান হবেÑ এমন আশঙ্কা ছিল ঠিকাদারের। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি জমির মালিকানা নিয়ে কিছুটা বিরোধও ছিল। পরে সিটি করপোরেশন ও রেলওয়ে জমি বদলের মাধ্যমে এর সমাধান করে। কিন্তু একে অজুহাত হিসেবে নেয় ঠিকাদার। যদিও রেলের দাবি, ঠিকাদারকে অনেক আগেই ওই জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পের জমি বুঝে দেওয়া নিয়ে অনেক দিন ভোগান্তি ছিল। রেল মন্ত্রণালয় ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মধ্যে এ নিয়ে চিঠি চালাচালি এবং বৈঠক হয়েছে অনেকবার। নির্মাণকাজের সাইটে অনেক স্থাপনা ছিল। কিছু স্থাপনা সরানোর পর ২০১৭ সালের ১ আগস্ট বাস্তবে কাজ শুরু হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন উপযোগী সাইট ক্লিয়ারেন্স দেওয়া যায়নি তখন। কারণ নারায়ণগঞ্জ স্টেশন এলাকায় ইজারাদাররা ১৩টি রিট মামলা করে। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ স্টেশনের ডাউন ফেসিং পয়েন্টের কাছে ৩০০ মিটার ডাবল লাইনের উপযোগী না থাকা, দফায় দফায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সফলতা না আসা, বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে রেলের জমিকে তীরভূমি (ফোরশোর) দাবি করাসহ নানা বিপত্তি ছিল। এরপর এক এক করে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে। তবে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিপত্তি হলো, কাজ ফেলে চলে গেছে ঠিকাদার।

Comment here