দরিদ্র বাবার স্বপ্ন যমুনায় ডুবল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সমগ্র বাংলা

দরিদ্র বাবার স্বপ্ন যমুনায় ডুবল

নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে গোসল করতে গিয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মেধাবী ছাত্র সাফি মাহমুদ রিফাতের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে এক দরিদ্র বাবার ‘সোনালী স্বপ্ন’ যমুনায় ডুবে গেছে চিরতরে।

গতকাল বৃহস্পতিবার নদীতে নিখোঁজের পর আজ শুক্রবার রিফাতকে উদ্ধার করতে দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযান চালায়। অবশেষে রিফাতের খোঁজ না পাওয়ায় দুপুর ২টার দিকে অভিযান সমাপ্ত করে চলে যান তারা।

নিখোঁজের ২৬ ঘণ্টা পর আজ বেলা ৩টার দিকে ছোট যমুনা নদীর কলেজঘাট এলাকায় রিফাতের মরদেহ ভেসে ওঠে। পরে তার পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। আজ বাদ আছর জানাজা শেষে কোমাইগাড়ী এলাকায় তাদের পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

রিফাত পরিবার সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ি পূর্ব পাড়ার দরিদ্র সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাফি মাহমুদ রিফাত রুয়েটের ট্রিপল-ই বিভাগের  চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় চরম দারিদ্র্যতা সত্ত্বেও খুব কষ্ট করে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ দিচ্ছিলেন বাবা। তাদের প্রত্যাশা ছিল, ছেলে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবার মুখ উজ্বল করবে এবং সংসারের অভাব দূর করবে। কিন্তু ছোট যমুনার পানিতে ডুবে সেই স্বপ্ন আর প্রত্যাশার সলিল সমাধি ঘটেছে।

রিফাত ঈদের আগের দিন রাজশাহী থেকে বাড়িতে আসেন। ঈদের পরের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে তার আপন চাচাতো ভাই কে ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আজলান শাহরিয়ার উল্লাসকে সঙ্গে নিয়ে ছোট যমুনা নদীতে গোসল করতে যান রিফাত। নদী সাঁতরে তারা দুজন ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করেন। উল্লাস নদীর ওপারে যেতে পারলেও রিফাত মাঝপথে আটকে যান। তখন উল্লাসকে তিনি ডেকে বলেন, তিনি আর যেতে পারছেন না। এরপর ক্রমেই তিনি পানিতে তলিয়ে যেতে থাকেন। এই অবস্থা দেখে ভাইকে বাঁচাতে উল্লাস নদীর পাড়ে কলাগাছ আনতে যান। কলাগাছ এনে আর রিফাতকে দেখতে পায়নি সে। ততক্ষণে রিফাত পানির নিচে তলিয়ে যান।

গতকাল দুপুরে ওই ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ে ভিড় করেন অনেকেই। নিখোঁজ রিফাতের পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে নদীর পারে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাতে ভিড় কিছুটা কমলেও আজ শুক্রবার সকাল থেকে আবার নদীর পাড়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় করতে থাকেন।

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, রিফাত এক দিকে যেমন ছিলেন মেধাবী, অন্যদিকে খুবই ভদ্র। সকলেই তাকে খুব ভালোবাসতেন, তার মৃত্যুর সংবাদে এখন এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

সাফি মাহমুদ রিফাত নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ী মহল্লার সিরাজুল ইসলামের বড় ছেলে। তিনি নওগাঁ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন রুয়েটের ট্রিপল-ই বিভাগে।

Comment here