দানব সরকারকে রেখে স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারব না : ফখরুল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

দানব সরকারকে রেখে স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারব না : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে দানব আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এই দানব সরকারকে ক্ষমতায় রেখে দেশের জনগণের আশাআকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না এবং দেশের স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করতে পারব না। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে এই দানব সরকারকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সতর্ক অবস্থানের মধ্যে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। স্বাধীনতা দিবসে ‘মানুষ হত্যা’ ও ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেসহ অন্যান্য মহানগরীতে কর্মসূচি করছে বিএনপি। সকাল ১০টায় প্রতিবাদ সমাবেশটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৮টা থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাছিত আনজুর সভাপতিত্বে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইশরাক হোসেন, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

সমাবেশে বিএনপির নেতারা বলেন, এখন পর্যন্ত ১৭ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা দিবসে মানুষ হত্যা ও পুলিশি হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্বাধীনতা দিবসে এই ঘটনার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে কলুষিত করা হয়েছে। বিএনপি চায়, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক। তা না হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এই অন্যায় কঠোরভাবে প্রতিহত করবে।

মির্জা আব্বাস বলেন,  ‘আওয়ামী লীগ বলছে, এই যে কী হচ্ছে ঢাকা শহরে, বাংলাদেশে- বিএনপি নাকি ইন্ধন দিচ্ছে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বিএনপির নিজের আন্দোলনে বিশ্বাসী, কাউকে প্ররোচনায় করায় বিশ্বাসী না। বরং আওয়ামী লীগ প্ররোচনা দিচ্ছে এবং বিএনপিকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমাবেশে আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। এই সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা আমরা গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করেছি, এই সরকারের পেটুয়া বাহিনী, ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগসহ তারা নিরহ মানুষের ওপর অত্যাচার করছে, অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে, হত্যা করেছে ও আহত করেছে। আমাদের দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকার স্বাধীনতা দিবসের দিনে ৫০ বছরের পূর্তির দিনে বাংলাদেশের মাটিতে সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, এই সরকার স্বাধীনতার রক্ষাকবজগুলোকে সম্পূর্ণ ধূলিসাত করে দিয়েছে। গত তিন দিনে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম, সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, যে প্রাণ গেছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে তারা (সরকার) দায়ী। এই সরকারকে অবশ্যই জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে এবং রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আজ জনগণের আশা আকাঙ্খা পদদলিত করে চূড়মার করে ভুলুন্ঠিত করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আজকে পরিকল্পিতভাবে পার্লামেন্টকে একটা রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট বানানো হয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আজকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে, এই সরকারকে অবশ্যই চলে যেতে হবে।’

ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার ভারতের সাথে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক- ভালো কথা। আমরাও চাই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্নভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠুক। কিন্তু আমার এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি চুক্তি হয়নি, আমার এখন পর্যন্ত সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। পৃথিবী কোনো সভ্য দেশে এইভাবে সীমান্ত হত্যা হয় কিনা আমার জানা নেই। এই সরকার একটা নতজানু সরকার, তারা কোনোভাবেই ভারতের কাছ থেকে আমাদের যেসব ন্যায্য দাবি যেটা আদায় করতে দিতে পারছে না। এই সরকারকে রেখে আমাদের জনগনের আশা-আকাংখা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবো না। আজকে আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়েছে, আমাদের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের চক্রান্তের কারণে গত তিন বছর ধরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আটক রয়েছেন, তাকে অবশ্যই মুক্তি করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে তা থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে। আসুন ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই দানব সরকারকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার করি। সরকারকে বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। অন্যাথায় অতীতে যেভাবে স্বৈরাচার সরকারের যেভাবে পরিণতি হয়েছে আপনাদেরও সেভাবে বিদায় নিতে হবে। আসুন আজকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, আসুন আমরা ঐক্য গড়ে তুলি, জনগনের ঐক্য গড়ে তুলি।’ চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে দাম ‘আকাশচুম্বি’ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

 

Comment here