তত্ত্বাবধায়ক সরকার মৃত ইস্যু- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশকে এই সরকার চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যে কারণে আমরা বারবার করে বলছি যে, এই সরকারের এখন থাকার আর কোনো কারণ নেই। তারপরও তার নেতা, তার মন্ত্রীরা বলেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি এখন ডেড (মৃত) ইস্যু। ডেড ইস্যু হবে কেন? এটাই তো এখন সবচেয়ে লাইভ (জীবিত) ইস্যু।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, এই সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। এত চুরি করেছে, এত দুর্নীতি করেছে এবং একটা সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কারণ নেই। সেই কারণে আমরা বলেছি যে, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা একটা নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্দলীয় সরকারকে দায়িত্ব দিতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থা এটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে পরিকল্পিতভাবে। কারণ তারা জানে যে, তারা এত চুরি-চামারি করেছে যে, সাধারণভাবে যদি সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন হয় তাহলে কোনোদিনই তারা ক্ষমতায় ফিরে আসা দূরে থাকুক, পার্লামেন্টে ১০ ভাগেরও বেশি ভোট পাবে না। সেই সরকার আজকে ক্ষমতায় বসে আছে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের মানুষ দুইটা ইলেকশন দেখেছে- ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে। আবার ওই জায়গায় ফেরত যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এখানে দাদা (সুব্রত চৌধুরী) আছেন। গত ১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদেরকে ডেকেছিলেন সংলাপের জন্য। আমরা গিয়েছিলাম এ জন্য যে, আমরা মনে করেছিলাম আলোচনার মাধ্যমে যদি একটা অবস্থা তৈরি হয় সেই অবস্থায় আমরা যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারি তাহলে হয়তো বা জনগণের সেই ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন ঘটাতে পারব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইনমন্ত্রী পার্লামেন্টে কালকে বলেছেন যে, যখন নির্বাচন চলবে নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা থাকবে যে, তখন আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বা কাউকে আটক করা যাবে না। এই কথা কে বিশ্বাস করবে? সেই রাখাল বালকের গল্পের মতো। আপনারা সেই রাখাল বালক গ্রামবাসীকে বোকা বানানোর জন্য যখন প্রায় চিৎকার করতো যে, বাঘ আসছে বাঘ আসছে বলে গ্রামবাসী তখন লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসতো। এসে দেখে যে, কিছু নেই্ সেই রাখাল বালক দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে।’
তিনি বলেন, ‘থার্ড টাইম যখন সত্যি সত্যি বাঘ এসেছে, চিৎকার শুরু করেছে তখন দেখে গ্রামবাসী কেউ আসেনি। আমরা তো দুইবার প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। থার্ড টাইম (তৃতীয়বার) এদেশের মানুষ আর প্রতারণার স্বীকার হবে না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তোমাদের এই সমস্ত কথায় কেউ ভুলবে না। কারণ কখনোই তোমরা প্রমিজ (প্রতিশ্রুতি) রক্ষা করনি।’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কোনো কথা শুনতে চাই না। আগে পদত্যাগ করুন, তারপরে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচনকালীন একটা নির্দলীয় সরকার গঠন করবার জন্য সেই ব্যবস্থা নিন। নতুন নির্বাচন কমিশন নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার ও মহাসচিব তরুন কুমার দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অর্পনা রায়, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, প্রয়াত নেতার ছেলে গৌরব চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে গৌতম চক্রবর্তীর সহধর্মিনী ও ফ্রন্টের উপদেষ্টা দিপালী সাহা চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
Comment here