দুই ধাপ পার করে এক দফার আন্দোলন - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

দুই ধাপ পার করে এক দফার আন্দোলন

নজরুল ইসলাম : সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুই ধাপ পার করে এক দফা আন্দোলনের পরিকল্পনা কষছে বিএনপি। প্রথম ধাপ হচ্ছে- ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়’; দ্বিতীয় ধাপ- ‘কার্যকরী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রস্তুত’- উভয় শিরোনামে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ। এই দুই ধাপ পার করে রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজপথে নামবে বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির চিন্তা একটিই- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এই নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে- নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। এ লক্ষ্যে বিএনপির আন্দোলন চলমান আছে। তবে এটি যথেষ্ট নয়, আন্দোলন বেগবান করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের সুবিধাভোগী নয়, এমন দলগুলো একমত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে যেতে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে না বিএনপি। এই সরকারকে কীভাবে বিদায় করা যায়, সেই ইশতেহার তৈরি করছে। নির্বাচন কমিশন কী করবে কী করছে তা নিয়ে বিএনপির কোনো মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা একটিই, তা হচ্ছে- শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করতে হবে। এই দেশে নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে।

সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব মিলিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সুখকর অবস্থায় নেই। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যুগপৎ বা জোটবদ্ধভাবে এক দফা অর্থাৎ ‘সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর’- এর দাবিতে আন্দোলন করা গেলে তাতে সফলতা আসবে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি নয়; স্বল্পসময়ের মধ্যে আন্দোলনের ফসল বিএনপি ঘরে তুলতে চায়। এ কারণে ঈদের আগে সিলেটসহ দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলীয় কার্যক্রম সীমিত রেখে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতিতে ঈদের পর দলীয় কার্যক্রমে গতি আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রথম ধাপ অর্থাৎ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়- এই বক্তব্যের সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল একমত, তাদের সঙ্গে গত ২৪ মে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। এ পর্যন্ত নাগরিক ঐক্য, লেবার পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপি, এনপিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ন্যাপ-ভাসানী এই ১০ দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। এসব দল নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামতে একমত হয়েছে।

বাকি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে। আ স ম আবদুর রবের জেএসডির সঙ্গে সংলাপ দিয়ে এ পর্ব শুরু হবে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সংলাপ শেষ করতে চায় বিএনপি। আগস্টে প্রথম ধাপ শেষ করার পর সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ধাপ ‘কার্যকরী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রস্তুত’ করতে কী কী সংস্কার বিএনপি আনতে চায় বা আনা যায় তা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা হবে।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে ‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়’ সিদ্ধান্ত নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে আবার সংলাপ করবে বিএনপি। সেখানে ‘কার্যকরী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রস্তুত’ করতে কী কী সংস্কার আনা উচিত তা নিয়ে আলোচনা হবে।

এই দুই পর্বের সংলাপ শেষে আলোচনার মাধ্যমে মাঠের কর্মসূচির ধরন ও কৌশল ঠিক করা হবে। দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। যেখানে সবার স্বাক্ষর থাকবে। ক্ষমতায় গেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে বিএনপি সরকার।

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার দূতদের সঙ্গেও বিএনপি ভাবনা বিনিময় করছে। গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একজন নেতা বলেন, দুটি বৈঠকেই মুখ্য আলোচ্য ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আগামী সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে। ওই নেতা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টের পর বিএনপির সঙ্গে এসব বৈঠক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দলটির ঐক্যপ্রক্রিয়াকে বেগবান করতে সহায়ক হবে।

 

Comment here