রংপুরসমগ্র বাংলা

‘ধর্ষণে’ অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে বিয়ে, ১২ দিন পর আরেকজনকে বিয়ে

নজরুল মৃধা,রংপুর : রংপুরের বদরগঞ্জে বরই খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে প্রকাশ চন্দ্র রায় নামের তার এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। পরে ওই কিশোরী অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে গ্রাম্য সালিসে গত ৪ আগস্ট তার সঙ্গে ওই তরুণের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১২ দিন পর প্রকাশ আরেকটি বিয়ে করে তাড়িয়ে দেন ওই স্কুলছাত্রীকে।

এ ঘটনায় গত ২০ আগস্ট ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বদরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে থানায় এখন পর্যন্ত তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ রোববার দুপুরে বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ আলী বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তের জন্য এসআই রবিউল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রকাশ ও তার পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে থাকায় অধিকতর তদন্ত করতে হচ্ছে। এ কারণে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।’

বদরগঞ্জ থানায় দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই স্কুলছাত্রীর দিনমজুর বাবা উল্লেখ করেন, গত পাঁচ মাস আগে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া তার কিশোরী মেয়েকে বরই খাওয়ানোর জন্য ডেকে নেয় বদরগঞ্জের মধুপুর ইউনিয়নের নারায়ন চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রকাশ চন্দ্র রায়। পরে নিজের বাড়িতে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে না জানাতে কড়া ভাষায় মেয়েটিতে শাসায় প্রকাশ। ফলে মেয়েটি বিষয়টি পুরোপুরি চেপে যায়। কিন্তু কয়েক মাস পর তার শরীরে পরিবর্তন আসতে থাকলে এবং অসুখে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, চিকিৎসকরা কিশোরীর মা-বাবাকে জানিয়ে দেন, সে পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। দিনমজুর বাবা উপায় না পেয়ে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে যান। এরপর এক সালিসে প্রকাশ চন্দ্র রায় নিজের দোষ স্বীকার করলে ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দেন। মাতব্বরদের মতামতের ভিত্তিতে ঘটা করে প্রকাশ ও মেয়েটির বিয়ে হয়। বিয়েতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা যৌতুক নির্ধারণ হলে কিশোরীর দিনমজুর বাবা একটি দুধেল গাভী বিক্রি করে বরপক্ষকে ৩০ হাজার টাকা দেন। বাকি এক লাখ টাকা পরিশোধের জন্য প্রকাশের বাবা-মার কাছে সময় চান সেই দিনমজুর।

অভিযোগে স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, বিয়ের আসরে প্রকাশসহ তার বাবা-মা কিছু না বলে স্ত্রীকে বাড়িতে তোলেন। কয়েক দিন যেতে না যেতেই তারা যৌতুকের বাকি এক লাখ টাকা আনতে মেয়ের বাবাকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু অসহায় দিনমজুরের পক্ষে সেই টাকা প্রদান করা সম্ভব না হওয়ায় নির্যাতন চলে মেয়েটির ওপরে। অনেক নির্যাতনের পরও সে শ্বশুরবাড়িতেই পড়ে থাকে। এতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। বিয়ের ১২ দিন পর স্বামী প্রকাশ চন্দ্র রায় আরেকটি বিয়ে করে বাড়িতে এনে আগের স্ত্রীকে নির্যাতনের পর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।

বর্তমানে ওই স্কুলছাত্রী তার বাবার বাড়িতে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ঘটনায় জামাতা প্রকাশ চন্দ্র রায়সহ তার বাবা-মার বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা।

Comment here

Facebook Share