ধর্ষণে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা, গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে মৃত্যু - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ধর্ষণে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা, গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে মৃত্যু

বরিশালে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৬) ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি গোপন রাখায় ওই ছাত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়। পরে ওই অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীর গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল রবিবার শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত কিশোরী জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। খবর পেয়ে শেবাচিম হাসপাতাল থেকে কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় রবিবার রাতে বাকেরগঞ্জ থানায় তিন জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন কিশোরীর বাবা। বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরীর বাবা জানান, তার মেয়ে স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার পথে তাকে ভাতশালা গ্রামের বখাটে শাকিল গাজী (২৩) নামের এক তরুণ উত্ত্যক্ত করতেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়।

তিনি বলেন, ‘চার মাস আগে আমার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর জন্য বরিশালে গিয়েছিলাম। এ সময় বাড়িতে মেয়ে একাই ছিল। তখন শাকিল গাজী বাড়িতে এসে ওই কিশোরীকে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করেন। এতে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।’

মামলার বাদী জানান, পরে বিষয়টি ওই কিশোরী শাকিলকে জানায়। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শাকিল তার ভাবীর মাধ্যমে মেয়েটিকে নিয়ে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী বাজারের একটি ক্লিনিকে যান। ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন, তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর পর থেকে শাকিল গাজী, তার ভাবী ও বোন মিলে মেয়েটিকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দেন। পরে তাকে তারা বিভিন্ন ওষুধ সেবন করান। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। রক্তক্ষরণ শুরু হলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পুনরায় কালিশুরীর ওই ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা দ্রুত শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান। সেখানেই রবিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

কিশোরীর মা জানান, মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন দেখে তার সন্দেহ হয়। অর্থাভাবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। এরপর মেয়ের কাছে জানতে চাইলে সে ঘটনা খুলে বলে। শাকিলও অপরাধের কথা স্বীকার করেন। এ নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তারা শাকিলের বড় ভাই জাফর গাজী ও চাচাতো ভাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য নজরুল ইসলামকে জানান। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।

অভিযুক্তের চাচাতো ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর বিষয়টি জানতে পেরে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর কি করেছে তা আমি জানি না।’

ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম শফিক বলেন, ‘আমি ঘটনা জানতে পেরে মেয়েটিকে সু-চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এখন তো মেয়েটি মারাই গেল। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

বাকেরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা জানান, সোমবার কিশোরীর ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে শাকিলসহ তিন জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

Comment here