ধার্মিক ভেবে বিশ্বাস করেছিলাম - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

ধার্মিক ভেবে বিশ্বাস করেছিলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আল আমিন সরকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। স্ত্রী লুৎফুন্নাহার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। দুজনেই চাকরিজীবী হওয়ায় শিশুসন্তান আবদুল্লাহ আবতাই আয়াতকে রেখে যেতেন ‘বিশ্বস্ত’ গৃহকর্মী শাহিদা ওরফে তাজনারার কাছে। অত্যন্ত পরহেজগার মানুষ তিনি! কিন্তু সেই বিশ্বাসের কী দাম দিলেন ওই নারী। বাসার সিসি ক্যামেরায় তার যে কা- ধরা পড়েছে, শিউরে ওঠার মতো। ভিডিও ফুটেজটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুই বছরের ছোট্ট শিশুর প্রতি ৪৫ বছরের নারীর এমন আচরণ দেখে চিন্তিত সন্তানদের মা-বাবারা।

ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, বাথরুমে বসিয়ে আয়াতকে গোসল করাচ্ছেন গৃহকর্মী শাহিদা। হঠাৎ রুমের ভেতর ছুড়ে ফেলেন। ওইটুকুন শিশুকে লাথি মারতে থাকেন ফুটবলের মতো। ছোট্ট আয়াত কী আর তা সামলাতে পারে? লাথির জোরে সরে যাচ্ছিল কিছুটা দূরে। তাতেও থামেননি শাহিদা, নিজের

পা চালিয়ে যান একের পর এক। গলা বাড়িয়ে আবার খোলা দরজায় চোখ রাখছেন, কেউ দেখছে কিনা। কাঁদতে থাকা শিশুটিকে সেভাবেই ফেলে রেখে কাজে মন দেন। ঘরে থাকা সিসি ক্যামেরার সাহায্যে অফিসে বসে নিজের স্মার্টফোনে সেই দৃশ্য দেখছিলেন বাবা আল আমিন। টিকতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গেই ছোটেন বাসার দিকে। উদ্ধার করেন কলিজার টুকরা সন্তানকে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আল আমিন বলেন, ‘আগে আমার মা বাসায় থাকতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর শাহিদার কাছেই ছেলেকে রেখে আমরা কর্মস্থলে চলে যেতাম। ২ মাস ধরে বাবুকে (আয়াত) দেখাশোনা করছিলেন। গৃহকর্মী শাহিদা আমাদের আত্মীয়র মতোই ছিলেন। মনে হয়েছিল তাকে বিশ্বাস করা যায়, অত্যন্ত পরহেজগার মানুষ। কিন্তু বাবুকে মারধরের বিষয়ে কোনোভাবে আমার স্ত্রীর সন্দেহ হওয়ায় বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলে। সে অনুযায়ী গত ৮ নভেম্বর আমি বাসায় ক্যামেরা বসাই। এ বিষয়টি অবশ্য আমরা শাহিদাকে বুঝতে দিইনি। আইপি ক্যামেরা হওয়ায় স্মার্টফোনেই লাইভ দেখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘ক্যামেরা বসানোর পাঁচ দিনে যা ধরা পড়েছে, সেগুলো তেমন কিছু নয়। কিন্তু ১৪ নভেম্বর আমি অফিসে বসে বাসার ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। তখনই বাবুকে মারধরের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা চোখে পড়ে। এটি দেখার পরও আমি শাহিদাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি বুঝতে দিইনি। তাকে শুধু বলেছিলাম পাশের বাসার একজন ফোন করে জানাল, বাবু নাকি কাঁদছে। যদিও শাহিদা বিষয়টি অস্বীকার করে। এদিকে সঙ্গে সঙ্গেই আমি ও আমার স্ত্রী বাসার উদ্দেশে রওনা হই। বাসায় ফিরে আমি আমার সন্তানকে জড়িয়ে ধরেছি, কোলে নিয়েছি। কিন্তু অন্য দিনের মতো চিৎকার করেÑ বাবা বলে ডাকেনি। মারের ভয়ে বাচ্চাটা এতটাই ভীত হয়ে পড়েছিল যে, বাবা বলতেই ভুলে গিয়েছিল। এর পরও শাহিদাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বাবুকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলাম। চিকিৎসক বলেছেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে শারীরিকভাবে ওর তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে মানসিকভাবে অনেক ভয়ের মধ্যে আছে।’

ঘটনার পরদিন গত ১৫ নভেম্বর রাতে শাহজাহানপুর থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন আল আমিন সরকার। পরে অভিযুক্ত গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সবুজবাগ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রাশেদ হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘গৃহকর্মীর হাতে শিশু নির্যাতনের ঘটনা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়ার পর পরিবার মামলা করে। এ ঘটনায় সেদিনই গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘আসামি শাহিদাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তখন তিনি জ্ঞান হারান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। সুস্থ হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে, ঠিক কী কারণে শিশুটির ওপর এমন নির্যাতন করেছেন।’ তবে এ ঘটনার পর থেকে আসামি শাহিদাও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান ওসি শহীদুল হক।

Comment here