নজর এখন সংসদে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

নজর এখন সংসদে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে সরকার গঠন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলীয় এমপি জয়লাভ করায় সংসদে সরকারি দলের নেতৃত্বও নিশ্চিত হয়েছে। এখন সংসদের বিরোধী দল কারা হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা। একই সঙ্গে এই সংসদে যুক্ত হবেন আরও ৫০ জন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে সেই তালিকায় কারা থাকবেন, তা নিয়ে অনেকের আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার নির্ধারণের পাশাপাশি সরকারি ও বিরোধী দলের হুইপ নির্বাচন করা হবে। একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। একই সঙ্গে রীতি অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেবন। সেই ভাষণের ওপর প্রায় মাসব্যাপী সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন।

জানা গেছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশণ বসতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সংসদ নেতা হিসেবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসনিাকে সংসদ নেতা নির্বাচন করেছে। সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হয়েছেন দলের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। এই সংসদেও স্পিকার থাকছেন ড. শিরীন শারিমন চৌধুরী। ডেপুটি স্পিকার থাকছেন শামসুল হক টুকু। একাদশ সংসদের চিফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী এবারও স্বপদে বহাল থাকছেন। তবে পরিবর্তন আসবে সরকারি দলের হুইপ পদে। কারণ একাদশ সংসদের তিনজন হুইপ এবারের সংসদ নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেননি। তারা হলেন মাহবুব আরা গীনি, শামসুল হক ও আতিউর রহমান আতিক।

হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন ও ইকবালুর রহিম জয়ী হয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারি দলের হুইপ নির্ধারণ করে সংসদকে অবহিত করতে হবে। স্পিকার বিধান অনুসারে সেটা অনুমোদন করবেন।

এদিকে এখনও সুরাহা হয়নি সংসদে বিরোধী দলের ইস্যুটি। যদিও রাজনৈতিক দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে প্রধান বিরোধী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। সেই অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করেছে জাতীয় পার্টি। এছাড়া দলটির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে সংসদীয় দলের চিফ হুইপ ও সংসদ সদস্য হাফিজউদ্দিন আহম্মেদকে জাতীয় পার্টির হুইপ মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতাসহ সংশ্লিষ্ট পদগুলোর স্বীকৃতি পেতে স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অনেকে মনে করছেন বিরোধী দলীয় নেতা, উপনেতা, চিফ নির্বাচিত করা হয়েছে। সেটা ঠিক নয়। বিরোধী দলীয় নেতা ঠিক করবেন স্পিকার। এটা তার এক্তিয়ার। আমাদের সংসদীয় দলের সভার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানাবো।

অপরদিকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের জোটবদ্ধভাবে বিরোধী দলের ভূমিকার থাকার কথা শোনা গেলেও তাতে খুব একটা হালে পানি পায়নি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী এই স্বতন্ত্র এমপিদের বেশিরভাগই বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে অনাগ্রহী। তারা যে কোনো ফরম্যাটে সরকারের কাছাকাছি থাকতে চান। সংসদ অধিবেশন বসলে বিষয়টি সুরাহা হবে।

এদিকে আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গত ৯ জানুয়ারি গেজেট হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের। এই হিসাবে আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ভোট করতে হবে। ভোটার তালিকা প্রস্তুতসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির পরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। সংসদের সাধারণ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের ভোটার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, কল্যাণ পার্টি একটি, স্বতন্ত্র ৬২টি আসন পেয়েছে।

সাধারণভাবে প্রতি ছয়টি আসনের বিপরীতে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে। সংরক্ষিত আসন পেতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা একাধিক বিকল্প পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তারা চাইলে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। অথবা নিজেরাও এক বা একাধিক স্বতন্ত্র নির্দলীয় জোট গঠন করতে পারবেন। এ ধরনের জোট গঠনের বিষয়টি নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ২১ কার্যদিবসের (৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে ইসিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।

এ সময়ের মধ্যে কোনো স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগ না দেন, তাহলে তাদের আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত (নির্দলীয় সদস্য তালিকা) করবে ইসি। এই তালিকাভুক্ত সদস্যদের সমন্বয়ে একটি ‘নির্দলীয় জোট’ গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তখন ওই জোটে থাকা স্বতন্ত্রদের আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হবে। অবশ্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কী করবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়ে জানা যায়নি। তবে সবাই মিলে নির্দলীয় জোট না করলেও নারী আসনের জন্য ছয়জন করে আলাদা আলাদা জোট করা হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ। এবার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদে তাদের ভূমিকা কী হবে, সংরক্ষিত আসন কীভাবে নেওয়া হবে, এসব বিষয়েও তাদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে আসন পেয়েছে ২২৩টি। সেই হিসাবে দলগতভাবে দলটি সংরক্ষিত আসন পাবে অন্তত ৩৭টি। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ৬২ জন। তারা সবাই মিলে নির্দলীয় জোট করলে ১০টি আসন পাবেন। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। তারা সংরক্ষিত আসন পাবে ২টি। অন্য তিনটি দল একটি করে আসন পেয়েছে, দল তিনটি একজোট হলে ১ টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা নির্ভর করবে নারী আসন পেতে কে কার সঙ্গে জোটভুক্ত হচ্ছে তার ওপর।

জানা গেছে, এবারের সংসদে সংরক্ষিত আসনে অধিকাংশই নতুন মুখ আসতে পারে। এর মধ্যে ত্যাগী নেতাদের পরিবারের সদস্য, সংস্কৃতি, বিনোনদন অঙ্গণের প্রতিনিধিদের দেখা যেতে পারে।

এদিকে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতির তেমন কোনো পদমর্যাদা না থাকলেও তারা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। সংসদে পৃথক রুম, পিএস, গাড়ি, ভাতা ও নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। মন্ত্রিত্ব প্রত্যাশীদের চোখ এখন সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদে।

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ গত ৩০ জানুয়রি। অধিবেশন শুরুর পর মোট ১০ কার্যদিবসে ৫০ টি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

Comment here