নতুন করোনার মিউটেশন ধরা পড়লো যেভাবে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

নতুন করোনার মিউটেশন ধরা পড়লো যেভাবে

বিবিসি বাংলা : মহামারি শুরুর সময়টা থেকেই বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের জেনেটিক গঠনে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা; তার ওপর নজর রাখছিলেন। গত বছর ডিসেম্বরে চীনে প্রথম যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, সেটা এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭ বার পরিবর্তিত হয়েছে। অনেক পরিবর্তনই ভাইরাসের আচরণে কোনো প্রভাব ফেলে না। টিকে থাকার জন্যই ভাইরাসটি সবসময় নিজেকে বদলাতে থাকে।

যুক্তরাজ্য থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাসের যে মিউটেশনটি নিয়ে এখন সারা দুনিয়ায় হৈচৈ চলছে তার নাম B.1.1.7 অথবা VUI-202012/01 – এবং এটির সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা অন্য প্রজাতিগুলোর চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। ব্রিটেনে এটি এখন ছড়াচ্ছে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে।

করোনাভাইরাসের গায়ে যে কাঁটার মতো স্পাইকগুলো থাকে – এ মিউটেশনের ফলে সেগুলোর প্রোটিনে এমন কিছু পরিবর্তন হচ্ছে যাতে এটা আরও সহজে মানুষের দেহকোষে ঢুকে পড়ছে। এই নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে ১৪টি মিউটেশন চিহ্নিত করা হয়েছে। ভাইরাসের মধ্যে প্রোটিন তৈরির উপাদান হচ্ছে অ্যামিনো এসিড এবং তাতে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসছে এই মিউটেশন। এসব মিউটেশনের কথা বৈজ্ঞানিকদের আগে এত বিশদভাবে জানা ছিল না।

করোনাভাইরাসের নতুন যে প্রকারটি চিহ্নিত হয়েছে যুক্তরাজ্যে, তা বৈজ্ঞানিক আসল অবকাঠামোর চেয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী। এর নাম হচ্ছে কগ-ইউকে বা ‘কোভিড-১৯ জেনোমিক্স কনসোর্টিয়াম’; এতে দেড় লক্ষেরও বেশি সার্স-কোভ-টু ভাইরাসের নমুনার জেনেটিক ইতিহাস সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

এ কারণেই করোনাভাইরাসের নতুন কোন মিউটেশন হলে এর মধ্যে যে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো হয়; সেগুলো এই কগ-ইউকের বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. লুসি ভ্যান ডর্প মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের বিবর্তন পরিলক্ষণ করে থাকেন। নতুন করোনাভাইরাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ সময়ই এগুলো গুরুত্বহীন এবং খুব বিরল দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া এটা ক্ষতিকর কিছুও নয়। সার্স-কোভ-টু’র জেনোমে আমরা যে মিউটেশনগুলো দেখেছি তার বেশির ভাগই ভাইরাসটির আচরণে কোনো পরিবর্তন আনে না। কিন্তু দু-একটি ক্ষেত্রে ভাইরাসটি এমন কিছু মিউটেশন ঘটিয়ে ফেলে – যা তাদের টিকে থাকা এবং বংশবৃদ্ধির ক্ষমতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ রকম মিউটেশন বহনকারী ভাইরাস তখন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে; যদি মহামারি ছড়ানোর পূর্বশর্তগুলো অনুকুল থাকে।’

 

Comment here