নাটোরের শংকর গোবিন্দ চৌধুরির মৃত্যুবার্ষিকী - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

নাটোরের শংকর গোবিন্দ চৌধুরির মৃত্যুবার্ষিকী

সজিবুল ইসলাম হৃদয়, নাটোর প্রতিনিধিঃ আজ ১৩ সেপ্টেম্বর, নাটোরের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মানুষ হিসেবে সমাজে তিনি মনুষ্যত্ব ও মহত্ত্বের যে নিদর্শন রেখে গেছেন তা কখনই ভোলার নয়। নাটোরবাসীর ছায়া ও ভরসার জায়গা ছিলেন শংকর গোবিন্দ চৌধুরী।

নাটোরের মাটি ও মানুষের সন্তান ,ক্ষণজন্মার জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ অবিসংবাদিত নেতা ১৯২৬ সালের ৪ মার্চ সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের ভাবনী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে। তার বাবা জ্ঞানদা গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন নাটোর ভাবনীর জমিদার এবং বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সময়কার গ্র্যাজুয়েট। ১৯৫৪ সালে তিনি মহীয়ষী অনিমা চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ১৯৪৫ সালে বগুড়ার আদমদীঘি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে উচ্চশিক্ষার্থে কোলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ার সময় তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৪৭ সালে বিএসসিতে অধ্যয়নকালে ভারত বিভক্তির সময় নানা প্রতিকূল পরিবেশে তার শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

নাটোরের গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগদান করেন ১৯৫৪ সালে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নিহত হওয়ার পরবর্তী এরশাদের শাসনামলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের দায়ে তাকে এক বছর কারাবরণ করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষের একজন ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে নাটোরের গবর্নর নিযুক্ত করেন।

শংকর গোবিন্দ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ নম্বর সেক্টরের জোনাল কাউন্সেলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি একাধিকবার নাটোর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নাটোর সদর আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নাটোরের সব ধর্মের মানুষের প্রিয়জন। অন্যের দুঃখে তিনি হতেন ব্যথিত। বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে ছুটে যেতেন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের কাছেও তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। নাটোরে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। নাটোর রানী ভবানী মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নাটোরের বনলতা হাইস্কুল, বড়গাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়সহ নাটোরের ডায়াবেটিক সেন্টার সহ বহু প্রতিষ্ঠান তারই অক্লান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে। তার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নাটোরের মানুষের পাশে সব সময় নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন নাটোর পৌরসভার মেয়র এবং জেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম সহ-সভাপতি উমা চৌধুরী জলি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএইচে তিনি পরলোকগমন করলে তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গণে এনে দেয় শূন্যতা।পরবর্তীতে ২০১৮ সালে স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর‍) এ ভূষিত হোন নাটোরের কৃতিসন্তান প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরী।

Comment here