"নাফ" নদে গরুর স্রোত - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
চট্টগ্রামসমগ্র বাংলা

“নাফ” নদে গরুর স্রোত

কোরবানির ঈদে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আসত খুব অল্পসংখ্যক। এবার স্রোতের মতো আসছে। ভারত থেকে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় এবং সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে ভারতীয় গরু তেমন একটা ঢুকতে পারছে না। এ সুযোগে মিয়ানমার থেকে রেকর্ড সংখ্যক পশু ঢুকছে বাংলাদেশে। ট্রলারে করে নাফ নদ দিয়ে এসব গরু-মহিষ নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রতি ট্রলারে ১০০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত গরু আসছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে পশুগুলো নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার বেপারীরা। দেখতে দেশীয় গরুর মতো হওয়ায় কোরবানির পশুর হাটে এসব গরু-মহিষের চাহিদাও বেশি থাকবে বলে মনে করছেন তারা।

বর্তমানে সাগর উত্তাল, নাফ নদও উত্তাল। এতে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি এক প্রকার বন্ধই ছিল। কয়েক দিন ধরে শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে স্র্রোতের মতো গরু-মহিষ আসছে। গত তিন দিনে ২৫ ট্রলারে সাড়ে ৩ হাজারের ওপরে গরু-মহিষ ঢুকেছে। শাহপরীর দ্বীপ করিডোর শুল্ক্ক স্টেশনে খবর নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে মিয়ানমার থেকে ৪৪ হাজার ২৭০টি গবাদিপশু এসেছে। এরমধ্যে ৩০ হাজার ৫৩৩টি গরু ও ১৩ হাজার ৭৩৭ মহিষ। সর্বশেষ গেল জুলাইয়ে ১০ হাজার ৯৫টি গরু-মহিষ আসে। অথচ গত বছর জুলাইয়ে মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আসে প্রায় ৫ হাজার। অর্থাৎ গত বছর জুলাইয়ের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে দ্বিগুণ গরু-মহিষ আমদানি হয়েছে।

সরকার ৭ মাসে আমদানি করা পশু থেকে ২ কোটি ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা রাজস্ব পায়। গরু, মহিষ ও ছাগল আমদানির পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেপারীরা শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

টেকনাফ শুল্ক্ক কর্মকর্তা মো. ময়েজ উদ্দীন বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে নিয়মিত পশু আসে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু আমদানি আরও বেড়েছে। বৈধপথে পশু আমদানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, বৈধপথে আমদানিতে প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য ৫০০ টাকা এবং ছাগলের জন্য ২৫০ টাকা করে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে পশু আমদানিকারক টেকনাফের বাসিন্দা আবদুল্লাহ মনির বলেন, কোরবানি ঘনিয়ে আসায় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও মিয়ানমার থেকে আমরা পশু নিয়ে আসছি। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো থাকলে এবার রেকর্ড সংখ্যক পশু আমদানি হবে। পশু আমদানি স্বাভাবিক থাকলে পশুর হাটের চাহিদা পূরণ হবে, দামও ক্রেতার নাগালে থাকবে। তবে যে করিডোর দিয়ে পশু আমদানি হয়, সেখানে পশু রাখার কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

মিয়ানমারের গরু দেখতে অনেকটাই দেশীয় গরুর মতো। গড় সাইজও প্রায় অভিন্ন। আবার দেশীয় গরুর মতো হলেও দাম তুলনামূলক কম। ফলে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের গরুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া মিয়ানমারের যেসব গরু বাংলাদেশে আসে সেগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন পাহাড়ে ঘাস খেয়ে বড় হয়। ফলে এসব গরুতে রোগব্যাধি কম দেখা যায়। তাছাড়া ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজাকরণও হয় না বলে মিয়ানমারের গরুর মাংস অনেকটাই স্বাস্থ্যকর। মিয়ানমারের আকিয়াব, মন্ডুসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু-মহিষের চালান নিয়ে আসেন দেশের বেপারীরা। তবে গরু-মহিষের সঙ্গে যাতে কোনো অস্ত্র, মাদক কিংবা রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে সেজন্য সীমান্ত ও নাফ নদে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে বিজিবি।

টেকনাফে বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সল হাসান খান জানিয়েছেন, পশু আনার সময় নাফ নদে যাতে সমস্যা না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। পশুর সঙ্গে যাতে অস্ত্র, মাদক ও রোহিঙ্গা না আসতে পারে, সে বিষয়েও বিজিবি সতর্ক রয়েছে।

এক সময় কক্সবাজারের টেকনাফ বন্দর হয়ে বৈধপথে গরু-মহিষ আসার পাশাপাশি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন চোরাই পথে মিয়ানমারের গরু আনা হতো। বিশেষ করে টেকনাফের মিস্ত্রিপাড়া, নয়াপাড়া, সাবব্রুম, নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, উখিয়ার রেজু আমতলী, ফাঁড়িরখীল, বালুটিয়া এবং উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকার ঘুমধুমের তুমব্রুসহ আরও কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে অবৈধপথে মিয়ানমারের গরু আসত। এবার এসব পথে গরু আসছে না বললেই চলে। বৈধপথে আসা পশু থেকে যাতে কেউ চাঁদাবাজি করতে না পারে সেজন্য কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) এবিএম এস দোহা বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আসছে। বেপারী-ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখান থেকে পশু সরবরাহের ক্ষেত্রে পথে যেন কোনো চাঁদাবাজি না হয় তাও নজরে রাখা হচ্ছে।’

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরটি শুল্ক্ক স্টেশনের আওতাধীন জোন। ২০০৩ সালে ২৫ মে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে গবাদিপশু আসারোধে বিজিবির চৌকি-সংলগ্ন এলাকায় এ করিডোর চালু করা হয়। আমদানি করা গবাদিপশু প্রথমে বিজিবির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। পরে সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে রাজস্ব জমা এবং স্থলবন্দরের শুল্ক্ক স্টেশনের অনুমতি নিয়ে গবাদিপশুগুলো করিডোর থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়।

Comment here