মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার ময়মনসিংহ জনসভায় নেত্রকোনার ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। পাঁচ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও এক পৌরসভার অধীনে এ ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয় ২০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, মোহনগঞ্জ পৌরসভা এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিককেন্দ্র : সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে মোহনগঞ্জের বাহাম গ্রামে রবীন্দ্র সংগীতজ্ঞ শৈলজারঞ্জন মজুমদার স্মরণে শান্তিনিকেতনের আদলে নির্মিত হয়েছে শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। শৈলজারঞ্জন মজুমদারের স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক নিবাসে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এর ক্যাম্পাসে রয়েছে শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ম্যুরাল, তিন তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, ভবনের দেয়ালে ইটের পিভিসি লাল টালি, ৩১০ সিটের মাল্টিপারপাস কনফারেন্স হল, ৮১ বর্গফুট বিশিষ্ট দ্বিতীয় তলায় লাইব্রেরি, ক্লাসরুম চারটি, অফিস রুম দুটি, ডাইনিং রুম, মিউজিয়াম ওম্যান ফ্লোর, জাদুঘর, সবুজ চত্বর পুকুর, লাইটিং ও আধুনিক সুবিধা সংবলিত মেলা প্রাঙ্গণ। শৈলজারঞ্জন মজুমদার ১৯০০ সালের ১৯ জুলাই মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অসংখ্য রবীন্দ্র সংগীতের সুর তৈরি করেন। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ভবনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
বাউল সাধক উকিল মুন্সি স্মৃতিরক্ষা কেন্দ্র : মোহনগঞ্জের জৈনপুরের বেতাই নদীর পাড়ে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে মরমী বাউল সাধক উকিল মুন্সির স্মৃতিরক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাউল সাধক উকিল মুন্সির প্রয়াণের ৪০ বছর পর ওই স্মৃতিকেন্দ্র নির্মিত হয়। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলার আবহমান কালের প্রাচীন শিল্প-সংস্কৃতি ও লোকসঙ্গীতের ওপর গবেষণা, সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরা হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গণপূর্ত বিভাগ। এখানে উকিল মুন্সির সমাধিসৌধ, একাডেমিক ভবন, সীমানা দেয়াল, সংগ্রহশালা, উকিল মুন্সী বসতবাড়ী নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে ওই স্মৃতিরক্ষা কেন্দ্রে উকিল মুন্সির নাতি কুলকুল শাহ, নাতনি আম্বিয়া খাতুনসহ তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য থাকেন। মোহনগঞ্জ পৌর শিশু পার্ক : হাওরের প্রবেশদ্বার মোহনগঞ্জ পৌরশহরের নওহালে ২১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ২৩ একর জমিতে নান্দনিক শিশুপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। মোহনগঞ্জ পৌরসভা শিশু পার্কটি নির্মাণ করে। পার্কের সীমানা দেওয়ালে গ্রিলসহ পার্কের মূল ফটকে দৃষ্টিনন্দন গেট, সুইমিংপুল, ছাতা, বসার স্থান ও শিশুদের বিনোদনে আকর্ষণীয় রাইডসহ বিভিন্ন উপকরণ রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহের জনসভা থেকে এসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
একশ শয্যা হাসপাতাল : মোহনগঞ্জে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখানে রোগীদের জন্য চারতলা ভবন, পুরাতন ভবন ও ৩টি আবাসিক ডরমেটরি ভবন মেরামত ও সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
উপজেলা অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল : মোহনগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ৫০০ আসন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হলরুম তৈরি করা হয়েছে। এলজিইডির অর্থায়নে এ অডিটরিয়াম নির্মাণে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এছাড়াও নেত্রকোনা জেলা সদর হাসপাতাল ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে ৩৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা, নেত্রকোনা গাবারগাতী সিধলী ৭৫ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, মদন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর ও স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পে ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, মদন উপজেলার কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণে ৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, সদর নেত্রকোনা জেলা কার্যালয় স্থাপনে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, দুর্গাপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ একাডেমিক ভবন নির্মাণে ১৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও মদন উপজেলার চানগাঁও ও হাঁসকুড়ি মৈধাম বন্যা আশ্রয়ণকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ৩ কোটি ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হয়।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, নেত্রকোনা জেলার ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহের সার্কিট হাউসের জনসভায় ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ১০৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
Comment here