পদ্মায় ফুটে উঠছে দ্বিতল সেতু - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

পদ্মায় ফুটে উঠছে দ্বিতল সেতু

তাওহীদুল ইসলাম,পদ্মা থেকে ফিরে : পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যাওয়ার আগে কথা হয় মাওয়া চৌরাস্তার চা-দোকানি হানিফের সঙ্গে। তিনি বললেনÑ পদ্মা সেতু আদৌ হবে কিনা এমন সংশয় প্রকাশ করেছিলেন কিছু লোক। এখন তারাই বলছিলেন আর কদিন পরই সেতুর কাজ শেষ হবে।

দিন-রাত পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলা দেখে খুশি স্থানীয় জেলে, দোকানি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের তো আনন্দের সীমা নেই। করোনা ভাইরাসের কারণে সেতুর কাজে অসুবিধা হচ্ছে কি? জানতে চেয়েছিলাম পদ্মা সেতুর ২৬ নম্বর পিলারের কাজে ব্যস্ত প্রকৌশলীদের। সেখানে তিনজন চীনা প্রকৌশলীসহ অন্তত ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। রড টেনে জোরে জোরে হাঁক দিচ্ছেন। কাজ চলছে পিলারের ক্যাপ বসানোর। তারা বলেন, কিছু চীনা কর্মী ছুটিতে আছেন। তবে এর প্রভাব পড়েনি। আগের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ চলছে। তবে আগামী দুই মাস চলতে পারবে। এর পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সমস্যা হতে পারে।

সেখানে কর্মরত আরিফ নামের এক কর্মী বলেন, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে। সেতুর ওপরের অংশ এবং নিচে রেল সেতুর কাজও চলছে। ভাইরাসের কারণে কাজের আপাতত সমস্যা হচ্ছে না। তবে এভাবে চলতে থাকলে সমস্যা হবে। পিছিয়ে যেতে পারে সেতুর নির্মাণকাজ।

পদ্মার জাজিরা প্রান্তে কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো। ওই পারে সেতুর দিকে তাকালে মনে হয়, পদ্মা সেতুর কাজ আর বাকি নেই। বাস্তবেও তা-ই। সরেজমিন দেখা গেল,

সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৯তমটির কাজ শেষ। বাকি পিয়ার নম্বর ১০, ২৬ ও ২৭। পদ্মা সেতুর ওপর উঠে দেখা গেল, স্প্যানের ওপর সø্যাব বসানোর কাজ চলছে। নিচের অংশে মানে রেল সেতুর কাজও এগিয়ে চলছে। শ্রমিকরাও কাজ করছেন নিরলস। নিজের দেশে এত্ত বড় একটা সেতু হবে এমন আনন্দে তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। জাজিরা প্রান্ত থেকে স্পিডবোটে করে মাওয়া প্রান্তে যাওয়ার পথে দেখা গেলÑ নদী পাড়ি দেওয়া বিভিন্ন যাত্রী খুশিমনে তাকিয়ে আছে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞের দিকে। তৃপ্তির ঢেঁকুর দিচ্ছেন ট্রলারে চড়া মানুষগুলো।

পদ্মায় নিয়োজিত কিছু শ্রমিক পাওয়া গেল মাওয়া প্রান্তের স্টেশন ইয়ার্ডে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে রাখা স্প্যানের পাশে কথা হয় কয়েক জন শ্রমিক ও একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে। সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে এই তথ্য দিয়ে তারা বললেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সেতুর নির্মাণকাজে প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্বব্যাপী অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেতুর কাজে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তবে সবাই মনে-প্রাণে চায়, এ রকম সমস্যা যেন না হয়। দীর্ঘ কাক্সিক্ষত সেতু নির্মাণে আর কোনো বাধা দেখতে চায় না দেশের মানুষ। ইতোমধ্যে মূল সেতুর ৩৬০০ মিটার স্প্যান দৃশ্যমান হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সব পিলার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে, তা নিশ্চিত করেই বলছেন প্রকল্প কর্তারা।

পদ্মা সেতুর ওপরে উঠে দেখা যায় সেখানে সø্যাব বসানোর কাজ চলছে। একেকটি সø্যাবের সঙ্গে আরেকটি সø্যাব বিশেষ আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হচ্ছে। রাস্তÍার মাঝখানে বসানো হচ্ছে ডিভাইডার। যদিও এগুলো প্রাথমিক ধাপ, তদুপরি ওপরের দিকে তাকালে মনে হয় সেতুর ওপরে আরেকটি মহাসড়ক। পদ্মা সেতুর পিলার থাকবে ৪২টি। এসব পিলারের জন্য ২৯৮টি পাইল নির্মাণ করতে হবে। এ পিলারগুলোর ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। সেতুতে ৪১টি স্প্যান বসানো হলে ট্রেন চলাচলের জন্য তার ওপর বসবে ২৯৫৯টি সø্যাব।

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৭.৫ ভাগ। করোনা ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। তবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পরে দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে নকশা জটিলতায় সে মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে। এ হিসাবে ২০২১ সালের জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কথা বলা হচ্ছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা আরও জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সেতুটির ২২টি পিলারে পাইলের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরামর্শক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, সেতুর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু খাতে ব্যয় বেড়েছে। নির্মাণশেষে প্রকল্পটির চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। চার বছরের মধ্যে তা শেষ করার কথা ছিল। সর্বশেষ হিসাবে ২০২১ সালের জুনে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাজেট প্রাক্কলন করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৬৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের বাকি অর্থ তিন বছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত) ব্যয় হবে। এ ক্ষেত্রে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত পুরো অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। আর বাকি অর্থ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় করা হবে। এ জন্য সম্ভাব্য প্রাক্কলনও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

Comment here