পুরনো সিলেবাসে পরীক্ষা চার স্থানে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

পুরনো সিলেবাসে পরীক্ষা চার স্থানে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। প্রথম দিনের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৩ শিক্ষার্থী। সারাদেশে অনুপস্থিত ছিল ১২ হাজার ৯৩৭ জন। বিভিন্ন কারণে বহিষ্কার হয়েছে ২২ জন। এদিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় চার জেলার চারটি কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে নীলফামারীতে এক ঘণ্টা পর ভুল বুঝতে পেরে প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করা হয়। যশোরের চৌগাছাতেও পরে সঠিক প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বরিশালে নৈর্ব্যক্তিক অংশ পুরনো সিলেবাসে গ্রহণ করার পর বিষয়টি ধরা পড়ে। লালমনিরহাটে পুরনো সিলেবাসে পুরো পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারা নির্ভুলভাবে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেছেন, পরীক্ষার মধ্যে এ রকম ঘটনায় পরীক্ষার্থীর মনোযোগ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আতঙ্কিত হয়ে পরীক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। নীলফামারীর ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যথাযথ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক আমাদের সময়কে জানান, এমন কোনো অভিযোগ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি পাননি।

দৈনিক মুক্ত আওয়াজ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নীলফামারী : শহরের রাবেয়া বালিকা বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে দুই বিদ্যালয়ের ৯৮ শিক্ষার্থীকে পুরনো প্রশ্নপত্র বিতরণের ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং নগরদারওয়ানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৮ সালের পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শিকক্ষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সংবাদ পেয়ে এডিসি (সার্বিক) আজহারুল ইসলাম কেন্দ্রে যান এবং দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরনো প্রশ্নপত্র তুলে নিয়ে নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তাদের বাড়তি একঘণ্টা সময়ও দেওয়া হয়েছে।

রাবেয়া বালিকা বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মহাফিজুর রহমান বলেন, একজন পুরনো সিলেবাসের পরীক্ষার্থীর জন্য এক বান্ডিল প্রশ্নপত্র বরাদ্দ ছিল। সেখান থেকে বাকি প্রশ্নগুলো ভুলক্রমে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

বরিশাল : নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নগরীর জগদীশ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা শেষে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনাকালে ভুলের বিষয়টি তারা বুঝতে পারেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

অভিভাবকরা জানান, এ প্রশ্নে মূল্যায়ন হলে এ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা বিষয়টি সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
জগদীশ সারস্বত স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম বলেন, ভুলের বিষয়টি জানাজানি হলেও পরীক্ষা শেষে এর কোনো সুরাহা হয়নি। এ ঘটনার সমাধান না হলে তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের ফল বিপর্যয় হবে। হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব এসএম ফখরুজ্জামান বলেন, ভুলের জন্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা দায়ী।

খবর পেয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস কেন্দ্রে গেলে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সমাধানের দাবি জানান। তিনি আশ্বাস দেন, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

চৌগাছা (যশোর) : ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ায় চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র সচিবসহ কেন্দ্র কমিটির পাঁচ শিক্ষককে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।

অব্যাহতিপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিব ও চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, বহুনির্বাচনী (সৃজনশীল) পরীক্ষা শেষে দেখা যায় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী সলুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, স্বরূপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও অন্য একটি স্কুলের ১৯ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থীকে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নে এবং দুজন অনিয়মিত পরীক্ষার্থীকে ২০১৯-২০২০ সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টদের জানাই। পরে লিখিত পরীক্ষা সঠিক প্রশ্নে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভুল।

লালমনিরহাট : সদর উপজেলার বড়বাড়ি শহীদ আবুল কাশেম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসে নিয়মিত ১৯৩ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ অভিযোগে কেন্দ্রসচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীরা মহেন্দ্রনগর উচ্চবিদ্যালয়, কাজিচওড়া উচ্চবিদ্যালয়, হীরামানিক উচ্চবিদ্যালয় ও কাশিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পরীক্ষার্থীদের ফলে যাতে প্রভাব না পড়ে, তাই বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে উত্তরপত্রগুলো আলাদাভাবে পাঠানো হয়েছে।

আরও আগে প্রবেশপত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে : শিক্ষামন্ত্রী

গতকাল সাধারণ বোর্ডে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র ও সহজ বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯ বোর্ডে ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ জন। মাদ্রাসা বোর্ডের কোরআন মাজিদ ও তাজবিদ বিষয়ে দুই লাখ ৪০ হাজার ৪৬৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডে ভোকেশনালে বাংলা-২ (১৯২১) (সৃজনশীল) (নতুন সিলেবাস/পুরনো সিলেবাস) এবং বাংলা-২ বিষয়ে পরীক্ষা দেয় এক লাখ ৯ হাজার ৪১৬ জন শিক্ষার্থী।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল যশোর শিক্ষা বোর্ডে একজন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে দুজন, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে একজন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে একজন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৫ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১২ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।এদিন রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র যথাসময়ে পায়নি জানানোর পর দীপু মনি বলেন, এ বছর কতগুলো জিনিস নজরে এসেছে। আমরা এর প্রতিটির বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি, যেন এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই না ঘটে। পরীক্ষার্থী পরীক্ষার আগে প্রস্তুত হবে। প্রবেশপত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে আরও আগে প্রবেশপত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সম্পূর্ণ নকল ও প্রশ্নফাঁসমুক্ত এবং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ করতে অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতা চান শিক্ষামন্ত্রী। পরীক্ষার আগের দিন হরতাল কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বিরত থাকবে বলে আশা করেন তিনি।

Comment here