‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই আমার ছেলে হত্যা করা হয়েছে’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই আমার ছেলে হত্যা করা হয়েছে’

আদালত প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলার বাদী নিহতের বাবা মো. বরকত উল্লাহর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তিনি তার এজাহারের সমর্থনে জবানবন্দী দেওয়া শুরু করেন। তিনি প্রায় ৩৫ মিনিট ব্যাপী এই জবানবন্দি প্রদান করেন।

এরপর আসামি অনিক সরকারের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান এ সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন। যা অব্যাহত থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি করে বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

জবানবন্দিতে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমি কাশফুল নামে একটি এনজিওতে চাকরি করি। আমার ছেলে আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। থাকত প্রতিষ্ঠানটির শেরেবাংলা হলের নিচ তলার ১০১১ নম্বর রুমে। গত বছর ৭ অক্টোবর ফজরের সময় ফোনে জানতে পারি যে, আমার ছেলেকে বুয়েটের কতিপয় ছাত্র মারধর করে গুরুত্বর জখম করে হত্যা করেছে। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক শেরেবাংলা হলের কতিপয় ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করি এবং ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানতে পারি যে, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ছাত্র মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতামিম ফুয়াদ, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, হোসেন মোহাম্মাদ তোহা, মুহাম্মাদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, আকাশ হোসেন, শামীম বিল্লাহ, এএসএম নাজমুস সাদাত, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি ও মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রাসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ছাত্র গত বছর ৬ অক্টোবর রাত ৮টা ৫ মিনিটের সময় আবরারকে তার ১০১১ নম্বর রুম থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে ওই বছর ৭ অক্টোবর রাত ২টা ৩০ ঘটিকার মধ্যে শেরেবাংলা হলের ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর রুমে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্টাম্প, লাঠিসোটা এবং রশি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড মারধর করে। যার ফলে ঘটনাস্থলেই আবরার মারা যায়।’

 

তিনি বলেন, ‘আসামিরা আমার ছেলের মৃত্যু নিশ্চিত করে হলের দ্বিতীয় তলার সিড়ির ডালে মৃতদেহ ফেলে রাখে। পরবর্তীতে কতিপয় ছাত্র সেখান থেকে আমার ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই আসামিরা আমার ছেলে আবরারকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারি আসামি সকাল, রবিন, অনিক, মনির, জিয়ন, মুজাহিদ, তানভীর ও সাদাত গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। জবানবন্দিতে আমার ছেলে আবরারকে আসামিরা কীভাবে হত্যা করেছেন তা বিস্তারিত বলেছেন। আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই আমার ছেলে আবরারকে নির্মামভাবে হত্যা করেছেন। আমি ন্যায় বিচার চাই। ’

আজ সাক্ষ্যগ্রহণের সময় রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া এবং রাষ্ট্র ও বুয়েট কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী সহায়তা করেন।

মামলায় ২২ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন। যাদের সাক্ষ্য গ্রহণকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অপর তিনজন আসামি পলাতক রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত বছর ৬ অক্টোবর একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। রাত ৩টার দিকে হল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে ওই বছর ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার পর ওই বছর ১৩ নভেম্বর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়।

 

Comment here