নিজস্ব প্রতিবেদক,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনাকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ দেখিয়ে জনসমাগম করে ধুমধামের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করলেন ব্রাহ্মবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মো. শাহ আলম। আজ শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে সিভিল সার্জনের সরকারি বাসভবনে চিকিৎসক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি।
যদিও করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে এ নির্দেশের কথা জানানো হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনা পালন করেননি সিভিল সার্জন নিজেই।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর-চাপুইর গ্রামের মোশারফ হোসেন মোল্লার ছেলে প্রকৌশলী মঈনুল হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সিভিল সার্জনের মেয়ে দন্ত চিকিৎসক শাননিন আলম মমোর বিয়ের আয়োজন করা হয়।
আজ জুমার নামাজের পর শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এতে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ফায়েজুর রহমান, ফৌজিয়া আক্তার, সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আজহারুর রহমান ও খোকন দেবনাথ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ক্লিনিকের দন্ত চিকিৎসকদের একটি দল, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারী ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান গেটের ভেতরে ফুল দিয়ে একটি তোরণ নির্মাণ করা হয়। আর বাড়ির ভেতরে তৈরি করা হয় প্যান্ডেল। ভেতরে একটি জায়গায় ১০টি বড় পাত্রে চলে রান্নার কাজ। খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, গরুর মাংস, মুরগি, চিংড়ি, রুই মাছ, জর্দা, কোমল পানীয়, দই, পোলাও প্রভৃতি।
জনসমাগম করে বিয়ের আয়োজন জানাজানি হলে আজ বিকেল পৌঁনে ৩টার দিকে সিভিল সার্জনের সরকারি বাসভবনে ফটকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া বিয়ে বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফটকের বাইরে সিভিল সার্জন শাহ আলম নিজেই অবস্থান করেন।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য জনসমাগম এড়াতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। এই সময়ে ঘটা করে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা ঠিক হয়নি।
তবে জনসমাগমের বিষয়টি অস্বীকার করে সিভিল সার্জন শাহ আলম বলেন, ‘এক মাস আগেই বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার মেয়ের গায়ে হলুদ ছিল। কোনো আয়োজন ছাড়াই স্বল্প পরিসরে বিয়ে হচ্ছে। পরিবারের অনেক সদস্যকেও দাওয়াত দিতে পারিনি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেব। করোনাভাইরাসের জন্য জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়।’
Comment here