নিজস্ব প্রতিবেদক,কুড়িগ্রাম : বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচার এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে করা রিটের শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে বিচারপতি ড. ডি ওয়াই চন্দ্রচাদ ও বিচারপতি কেএম জোসেফের যৌথবেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়। এদিন অধিকতর শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ আগামী ১৮ মার্চ ধার্য করে আদেশ দেন যৌথবেঞ্চ। শুনানিতে রিটের পক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট বিজন ঘোষ ও অ্যাডভোকেট অপর্ণা ভাট। ভারত ইউনিয়ন ও অন্যদের পক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ডি মোহনা। অ্যাডভোকেট বিজন ঘোষের বরাত দিয়ে গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন কুড়িগ্রাামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ ফেলানীকে (১৪) গুলি করে
হত্যা করেন। ওই সময় ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল ৫ ঘণ্টা। এরপর দুদিনব্যাপী দফায়-দফায় পতাকা বৈঠক শেষে ফেলানীর লাশ বিজিবির কাছে ফেরত দিয়েছিল বিএসএফ।
ওই সময় ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধীন চৌধুরীহাট বিওপির কোম্পানি কমান্ডারের এফআইআর-এর ভিত্তিতে ভারতের দিনহাটা থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়। পরে এর ভিত্তিতে ওই দিনই একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয়।
এ দিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদসহ ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য ভারত সরকারকে চাপ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কুচবিহার জেলা সদরের সোনারী এলাকায় ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। আদালত ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করেন।
ফেলানীর বাবা-মা এই রায় প্রত্যাখান করলে ১৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০১৫ সালের ২ জুলাই অমিয় ঘোষকে আবারও নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। ওই রায়কেও প্রত্যাখান করেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও কলকাতার মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’র সাধারণ সম্পাদক কিরিটি রায়। তারা যৌথভাবে ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট ভারতের সুপ্রিমকোর্টে একটি রিট আবেদন দাখিল করেন। ওই রিটের হলফনামায় ফেলানীর বাবার পাশাপাশি কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন সই করেছিলেন। ওই বছর ১৪ আগস্ট ভারতের সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত ফুল বেঞ্চ শুনানি শেষে রিট আবেদনটি গ্রহণ করেন এবং বিবাদীদের জবাব প্রদানের নোটিশ জারির আদেশ দেন। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে মামলার বিবাদীরা তাদের জবাব দাখিল করেন। কিন্তু এরপর থেকে একের পর এক তারিখ বদল হলেও শুনানি হয়নি।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাদী হয়ে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে অপর একটি রিট আবেদন দাখিল করেন।
এ প্রসঙ্গে এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, উভয় রিটের শুনানি এক সঙ্গে করা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ফেলানী হত্যা ইস্যুর যৌক্তিক নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছি।
Comment here