বাঘা উপজেলা প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আড়ানী সেতুর ওপর ভাঙা লাইন দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। সেতুর ওপর পশ্চিম দিকে রেললাইনের জয়েন্টের স্থানে ৬ ইঞ্চি ভেঙে গেছে।রেল সেতুর স্লিপারে রডের বদলে বাঁশ ও কাঠের বাতা দিয়ে আটকানো রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নড়বড়ে অবস্থায় থাকলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।
জানা যায়, বড়াল নদীর ওপর ব্রিটিশ আমলের নির্মিত হয় এ রেল সেতুটি। এর ওপর দিয়ে ১৩টি ট্রেন প্রতিদিন দুবার করে ২৬ বার রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঘটনাটি জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়াল নদীর ওপর সেতুর পশ্চিম দিকে রেললাইনের জয়েন্টের স্থানে ৬ ইঞ্চি ভেঙে গেছে। সেতুর ওপর স্লিপার লাইনের সঙ্গে আটকানোর জন্য দুপাশে ৮টি করে পিন দেয়ার কথা। কিন্তু সেখানে রয়েছে কোনোটাতে দুটি, আবার কোনোটাতে তিনটি, আবার কোনোটাতে একটিও নেই।
এ ছাড়া কোনোটার নাটবল্টু, ক্লিপ, হুক কিছুই নেই। দুই লাইনের গোড়ায় ফিসপ্লেটে চারটি নাটবল্টু থাকার কথা। কিন্তু স্লিপারে তা নেই। স্লিপারগুলোও বহু পুরনো যুগের। বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।
এ রেল সেতুর ওপর স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানো কিছু পিন খোলা, সেগুলো হাত দিয়ে বের করা যাচ্ছে। লোহার পিনের জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে কিছু কাঠের গুজ। লোহার মোটা পাতের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা প্লেন সিটের পাত। স্লিপার আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কাঠের বাতা।
এ সেতুটিতে মোট ব্যবহার করা হয়েছে ২৬২টি স্লিপার। সেই স্লিপারে ২ হাজার ৯৮টি ক্লিপ থাকার কথা; কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র প্রায় ৯২৮টি।
এর কিছু অংশে কাঠের গুজ এবং অন্য জায়গায় ফাঁকা রয়েছে। ২৬২ স্লিপারের মধ্যে ৬০টি স্লিপার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির পূর্ব দিক থেকে দুটি পিলারের পর তিন নম্বর পিলারটির নিচে কয়েক বছর আগে গোড়ায় পাথর ফেলা হয়। সেই পাথরগুলো পিলার থেকে দূরে সরে গেছে।
সেখানকার পিলারের গোড়ায় পাথর-মাটি কিছুই নেই। ফলে পিলারের উত্তর দিকের নিচে ফাঁকা হয়ে গেছে। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ‚ তার পরও ব্যবহার হচ্ছে।
রাজশাহীর রেলের কর্মচারী ইয়াকুব আলী বলেন, সেতুর ওপর ভাঙা স্থান মেরামতের কাজ শুরু করেছি। ট্রেন এ স্থানে এসে ধীরে ধীরে পার করা হচ্ছে। আমি আড়ানীর ১৪ নম্বর রেল সেতুর ২৩৫ নম্বর থেকে কালাবিপাড়া ২৪১/০ নম্বর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রেল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছি। এ এলাকার রেলের সমস্যা ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
রাজশাহীর পিডব্লিউআইয়ের ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী বলেন, তার কাছে কাঠের গুজ ও বাতা ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিন বরাদ্দ না থাকায় ঝুঁকি এড়াতে কাঠের গুজ ও ট্রেন চলাচলের সময়ে স্লিপার যেন না নড়ে, তাই কাঠের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ছাড়া আড়ানী সেতুর নষ্ট হয়ে যাওয়া ৬০টি স্লিপারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দেয়া হয়েছে। সেগুলো পেলে তাৎক্ষণিক লাগানো হবে।
গেটম্যান ও স্থানীয় কুশাবাড়িয়া গ্রামের লায়ের উদ্দিন বলেন, সেতুটির কাঠগুলো অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এ কাঠগুলো পরিবর্তন করা দরকার। আর অনেক স্থানে পিন না থাকায় ট্রেন চলাচল করার সময়ে কাঠ সরে যায়। পিন কম থাকার কারণে কোনো রকম ট্রেন চলাচলের জন্য কাঠের বাতা দিয়ে স্লিপার আটকানো হয়েছে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেতুর ওপর ভাঙালাইন পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিম প্রধান প্রকৌশলী আলফাত মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর মেরামতের কাজ চলছে। আমাদের এই অঞ্চলের রেল সেতুগুলো অনেক পুরনো হলেও এখনও অনেকটা ভালো।
আজ অবধি কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। রেল চলার সময় জাম্পিংয়ের ক্লিপারগুলো সরে বা নড়ে না যায়, এ জন্য কিছু স্থানে কাঠের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে।
Comment here