বাড়ছে করোনা ফের প্রয়োজন সচেতনতা ঢের - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বাড়ছে করোনা ফের প্রয়োজন সচেতনতা ঢের

লে কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ : হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এই প্রকোপ বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে, বাড়ছে বাংলাদেশেও। মনে রাখা দরকার, এখনো পৃথিবী থেকে করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি; যদিও টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে এ ভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। তবে টিকিয়ে আছে পৃথিবীজুড়েই। তাই এখনো প্রয়োজন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা।

বর্তমান ভাইরাসের ধরন : করোনার অমিক্রন ধরনটি যাত্রা শুরু করে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। ডেল্টা ধরনের পর অমিক্রন বিশ্বজুড়ে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে। অমিক্রন ধরনটিও সময়ের বিবর্তনে পাল্টে ফেলেছে নিজ রূপ। অমিক্রনের বেশ কয়েকটি উপধরন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি কোন উপধরনটি ছড়িয়ে পড়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে ধরন-উপধরন যা-ই হোক, বাস্তবতা হলো, করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে।

লক্ষণ : জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা, ঘ্রাণ শক্তি হ্রাস, ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা, শরীর ব্যথা- এগুলো সবই হতে পারে করোনা আক্রমণে। বয়স্ক ব্যক্তির আরও বেশ কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে এতে। অস্বাভাবিক আচরণ, অসংলগ্ন কথাবার্তা, এমনকি মুর্ছা যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই এ মুহূর্তে কেউ জ্বর এবং আনুষঙ্গিক উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে অথবা চিকিৎসকের কাছে গেলে সর্বপ্রথম অবশ্যই করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, করোনার পাশাপাশি বর্ষার মৌসুমে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ নগরীতে বৃদ্ধি পায়। সুতরাং এ দুটি ভয়ানক ব্যাধি থেকে নিস্তার পেতে প্রয়োজন প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা।

করণীয় : বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে ঘরেই থাকুন। নিয়মিত বিরতিতে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাকে-মুখে রুমাল ব্যবহার করুন অথবা মুখ-নাক এমনভাবে ঢেকে রাখুন, যাতে পরিবেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে। কারো করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দ্রুত ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করে নিন। করোনা আক্রান্ত হলে ঘরেই থাকুন।

ঘরে বসে করোনার চিকিৎসা : করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন। যথেষ্ট পরিমাণ পানীয়, শরবত, তরল খাবার গ্রহণ করুন। প্রচুর মৌসুমি ফল, যেমন- আম, লিচু, কাঁঠাল খান। উপসর্গ অনুযায়ী করোনার চিকিৎসা করতে হবে। জ্বর-ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করুন। সর্দি-কাশির জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় যে কোনো ওষুধ গ্রহণ করুন। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে করোনার জন্য অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ গ্রহণ করুন। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী কিংবা আনুষঙ্গিক অন্যান্য ভয়ানক চিহ্নের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন। তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বা অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। গর্ভবতী, বয়স্ক ব্যক্তি কিংবা যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ জটিল রোগে আক্রান্ত, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

করোনার টিকা : যারা এখনো বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি, তারা তাদের বুস্টার ডোজ গ্রহণ করুন। বুস্টার ডোজ গ্রহণ করার পরেও অনেকে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন- এ কথা সত্য। তবে টিকা প্রদানের কারণে করোনার ভয়াবহতা এবং মৃত্যুহার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তাই ভয়াবহ করোনা থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই টিকা গ্রহণ করুন।

ভয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসুন। তবে অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার দিকে নজর দিন।

লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ

চেম্বার : আল রাজি হাসপাতাল (২য়তলা), ফার্মগেট, ঢাকা। ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫

Comment here