নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বয়ে যাওয়া মাঝারি ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কমে আসায় দুদিন ধরে বাড়তে শুরু করেছিল তাপমাত্রা। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে ঝরা বৃষ্টির কারণে আবারও শীত বাড়ার শঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের কোথাও কোথাও আজও সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। তবে রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আগামী দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। অর্থাৎ শীত কিছুটা বাড়বে। তবে আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি কেটে গেলে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, তেঁতুলিয়া ছাড়াও আজ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ডিমলায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, রাজারহাটে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল যশোরে সর্বোচ্চ ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছে ৫ মিলিমিটার।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। তবে বৃদ্ধি পেতে পারে দিনের তাপমাত্রা। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় হতে পারে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক
মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নীলফামারী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহতের পাশাপাশি বিস্তার লাভ করতে পারে।
চট্টগ্রাম : ভোর থেকেই সূর্যের দেখা নেই। দুপুরের আগে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ফলে ছুটির দিনে গতকাল চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট ছিল এক প্রকার ফাঁকা। শীতে কাবু মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। যদিও তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে খুব একটা কমেনি, কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর থেমে থেমে বৃষ্টির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী গতকাল চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ও বিকালে দুই দফা বৃষ্টি হলেও আগের দিনের চেয়ে তাপমাত্রায় খুব একটা হেরফের হয়নি বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান। আজও চট্টগ্রাম এবং পার্শ¦বর্তী এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান তিনি। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
পঞ্চগড় : কয়েকদিন ধরেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে পঞ্চগড়ে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও ঘনকুয়াশার কারণে দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম রহিদ জানিয়েছেন, গতকাল ওই এলাকায় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও : দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ। উত্তরে হিম শীতল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতবস্ত্রের জন্য সাধারণ আয়ের মানুষ ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসে ভিড় করছে।
বগুড়া : প্রচণ্ড শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বগুড়ায়ও। শুক্রবার এ জেলায় তাপমাত্রা নেমে আসে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে। শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। তবে আশার কথা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র হিসেবে পুরোদমে চলছে কম্বল বিতরণ।
সাঘাটা (গাইবান্ধা) : গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশায় সাত দিন ধরে ঢেকে আছে সবকিছু। তার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের মাত্রা। এতে কাহিল হয়ে পড়েছে যমুনাবেষ্টিত চর এলাকাসহ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মানুষ। প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন উপজেলার চাকুলি গ্রামের কৃষক আবু তারেক।
Comment here