বিএনপির ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’,সুইস ব্যাংকে টাকা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

বিএনপির ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’,সুইস ব্যাংকে টাকা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ করেছে সেই অর্থই সুইস ব্যাংকে গেছে কিনা তা খোঁজ নিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন টাকা সুইস ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। আপনারা যাদের প্রশংসা করেন, যাদের কথা বেশি বলেন, সুইস ব্যাংকের হিসাবের তালিকায় তাদের কথাটাই বেশি এসেছে। শুধু তা নয়, এমনও তথ্য এসেছে- ২০১৮ সালের নির্বাচনে একটা আসনের বিপরীতে ৩ জনের অধিক বা দুই জনের অধিক মনোনয়ন দিয়ে যে বাণিজ্যটা করল তার টাকাগুলো কোথায় রাখল? এই খোঁজটা করলে সুইস ব্যাংকের হিসাবটা পেয়ে যাবেন। গতকাল বাজেট অধিবেশনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নটা আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারছি।

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, এক সময় বাজেটের বেশির ভাগ বৈদেশিক অনুদাননির্ভর ছিল। ২০০৯ সালের পর থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাজেট প্রণয়ন করে মানুষের আয়বর্ধন ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পেরেছি বলেই আজকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। উন্নয়ন বাজেটের ৯০ ভাগই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারি। পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল হয়েছি। সংসদনেতা বলেন, আমরা আগামী ২০২৩-২৪ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীতকরণ, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ ডলার, রপ্তানি ৭২ বিলিয়ন ডলার, বিদ্যুৎ সরবরাহ ২৮ হাজার মেগাওয়াট ও অতি দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছি। এবারের বাজেট এসব লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, উচ্চ হারে সুদ থাকলে শিল্প বিকশিত হবে না। এজন্য আমার সুপারিশ থাকবে যেন ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে রাখতে যথার্থ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এটি করা হলে দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে সক্ষম করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজেরাও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। সমাজে দুর্নীতিটাকে তারা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দেয়। এটা মানুষের একটি মানসিক রোগে পরিণত হয়ে যায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার নীতি হচ্ছে ‘জিরো টলারেন্স’। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে আমরা একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব বাজেটে উপস্থাপন করেছি। কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় মানুষের অপ্রত্যাশিত কিছু অর্থ আসে। কিন্তু এ অপ্রত্যাশিত অর্থটা কোনো কাজে লাগানো যায় না। তখন তাদের একটা সুযোগ দেওয়া হয়, তখন এই টাকাটা মূলধারায় চলে আসে। তবে কোথাও গুজে রাখছে বা বিদেশে পাচার করছে কিনাÑ এটাও একটু খতিয়ে দেখা দরকার। পুঁজিবাজারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় আমরা কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলাম। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারে না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এমন মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রস্তাব করছি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে।

যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তা হলে স্টক লভ্যাংশে ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করায় আমরা আরও প্রস্তাব করেছিলাম, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভ থাকলে অতিরিক্ত রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা কেউ কেউ আপত্তি করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে এই ধারাটির আংশিক সংশোধনপূর্বক আমি প্রস্তাব করছি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি কোন অর্থবছরে কর-পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড, স্টক ও ক্যাশ দিতে হবে। তবে কোনো কোম্পানি এমনটা করতে ব্যর্থ হলে প্রতিবছরে রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত আয়কর আইনের প্রস্তাবিত ধারাগুলো আমরা বিবেচনা করব। মূসকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৫ শতাংশের নিম্নহারের উপকরণ কর রেয়াত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির দাবি করেছেন। হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রেয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে, আইনে সেই বিধান আনার প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক দ্রুত বিকাশমান ও সব থেকে সম্ভাবনাময় খাত। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে অর্থবছরে ১ শতাংশ প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে তৈরি পোশাক খাত আরও বিকশিত হবে। কর্মসংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আর্থিক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা আনতে বাজেটে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে দূরদর্শী সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল, বাজেট ঘাটতি সহনশীল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত, মুদ্রা বিনিময় হার বাণিজ্য সহায়ক। বাজেট ঘাটতি সবসময় ৫ শতাংশ ধরে রাখছি।

কখনো এর থেকে কমও হয়। সংসদনেতা আরও বলেন, খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিটা কখন এসেছে? যখন থেকে এই দেশে সামরিক শাসন এসেছে। সামরিক শাসকরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে কিছু লোককে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে ব্যাংক থেকে অকাতরে ঋণ নেওয়া এবং ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতির সৃষ্টি। এটা ব্যাংকের ইতিহাস। তিনি বলেন, যখন থেকে জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন থেকে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি শুরু। সেখান থেকে বের করে আনা অত্যন্ত কষ্টকর। তবে দেশে ধারাবহিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি চলে যেতে বাধ্য। ঋণে খেলাপি দূর করতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, নিয়ে যাচ্ছি। গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে সংসদনেতা বলেন, উনি এক লাখ অটোমেশন মেশিন উপহার দেবেন। এটা আমরা গ্রহণ করলাম, উনি উপহার দেবেন। তিনি যখন উপহার দিতেই চাচ্ছেন, দেশকে দেবেন, তিনি যথেষ্ট সচ্ছল তিনি পারবেন। দেওয়ার মতো ক্ষমতা তার আছে।

Comment here