বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সবাই যোগ্য। সবাইকে দলের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। তাই যাদের নৌকা (প্রতীক) দেওয়া হবে তাদের পক্ষেই থাকতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। বিরোধী দল না আসা সাপেক্ষে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতে প্রয়োজনে আসন উন্মুক্ত করা হবে। যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হতে না পারে। সেক্ষেত্রে একাধিক ডামি প্রার্থী রাখতে মত দেন দলীয় প্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় যেন বাধা দেওয়া না হয় সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।

এ সভায় নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ৩ হাজার ৩৬২ জনের অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন। সভায় গণমাধ্যমকে ডাকা হয়নি। সভা শেষে সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন দলীয় প্রধানের নির্দেশনার কথা গণমাধ্যমকে জানান। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সভাস্থলে আসেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন ঘোষণার আগে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা, ভোট যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সে জন্য মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি ক্যান্ডিডেটও (বিকল্প প্রার্থী) রাখতে বলেছেন, যেন কারও মনোনয়ন বাতিল বা মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে যেন ডামি ক্যান্ডিডেট নির্বাচন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, নেত্রী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। বিকল্প প্রার্থী রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিকল্প প্রার্থী রাখতে বলেছেন নির্বাচনে যাতে কেউ কোনো ধরনের অনিয়ম করতে না পারে। ভোটারের উপস্থিতি যাতে বাড়ে, সেজন্যও কাজ করতে বলেছেন। নোয়াখালী থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার তারেক রায়হান বলেন, ‘নেত্রী বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ভোটারদের কেন্দ্রে আনা। বিএনপি যদি ভোটে না আসে তাহলে ডামি ক্যান্ডিডেট রাখা। জোটের প্রার্থী নিয়ে দলীয় প্রধান কী বার্তা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভানেত্রী বলেছেন, আমরা প্রতিবার তো জোটের আসনে ছাড় দিই, দলের প্রার্থী দিই না। তাদের ছাড় দিই। এবার তারা নিজ যোগ্যতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসুক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী যদি কোনো আসনে জয়ী হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলীয় প্রধান। এদিকে সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল তোষামোদ করে ক্ষমতায় থাকতে চায় না, কারণ জনগণই তাঁর শক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ ছাড়া আমাদের আর কোনো অভিভাবক নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হয়ে আমি ক্ষমতায় থাকার জন্য তোষামোদের রাজনীতি করতে পারি না। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এ মাটি আমাদের। এখানে কারও খবরদারি বরদাস্ত করা হবে না। জনগণই আমাদের শক্তি এবং আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নই। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গত ১৫ বছরে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় জনগণ শান্তিতে রয়েছে। দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতার মেয়ে হিসেবে তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। রাজধানীর একটি আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, নেত্রী বলেছেন আপনারা সাড়ে ৩ হাজারের মতো প্রার্থী। এদের মধ্য থেকে আপনারা আমাকে ৩০০ নাম দেন। পরে সবাই নেত্রীকে দায়িত্ব দেন। ঢাকা মহানগরীর একটি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেত্রী জানান, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনে ‘ডামি প্রার্থী’ রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি যে কোনো নেতা বা যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন বলেও নির্দেশনা দিয়েছেন নেত্রী। প্রার্থীরা বলছেন, দল যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে তার জন্যই কাজ করবেন তারা। কুমিল্লার একটি আসনের এক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন যেন প্রতিযোগিতামূলক হয়, বিরোধীদের অংশগ্রহণ যেন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, সে জন্য যারা দলের মনোনয়নপত্র কিনেছেন, কেউ যদি যোগ্য হয়ে থাকেন, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন সেই নির্দেশনা দলীয় সভানেত্রী দিয়েছেন। মতবিনিময় সভা শেষে গণভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে এম আবদুল মোমেন বলেন, নির্বাচন যেন বানচাল করতে না পারে সে ব্যাপারে দলের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, সারা দেশে যেন নৌকা জেতে সে জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে কাজ করতে বলেছেন নেত্রী। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, নৌকার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, দেশের কোনো নাগরিক যদি স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চায়, আইন মেনে নির্বাচন করলে দল ততটা কঠোর হবে না।

Comment here