বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে ঘাতক গৃহকর্মী সুরভি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে ঘাতক গৃহকর্মী সুরভি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ধানমন্ডিতে শিল্পপতির ফ্ল্যাটে তার শাশুড়ি আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতিকে নৃশংসভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তাদের নতুন গৃহকর্মী নাহিদা আক্তার সুরভি। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। গত রবিবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর সে জানায়, স্বর্ণালঙ্কার লুট করতে সে একাই ফল কাটার ছুরি দিয়ে দুজনকে হত্যা করেছে। কিন্তু ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে বাসা থেকে বের হতে বাধা দেওয়ায় খুন করেছে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সুরভির ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, সে মানসিক ভারসাম্যহীন; নয়তো চতুরতার আশ্রয় নিচ্ছে। তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চান তারা।

সুরভির বক্তব্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্যচিত্রের বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে শিল্পপতি মনির উদ্দিন তারিমের ধানম-ির ২৮ নম্বর সড়কের

২১ নম্বর বাসায় ঢুকে সুরভি। নিহত আফরোজা বেগমের জামাতার বডিগার্ড বাচ্চু তাকে ওই বাসায় নিয়ে যান। এর পাঁচ দিন আগে বাচ্চুর সঙ্গে সুরভির পরিচয় হয়। ঘটনার দিন বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মেয়ে দিলরুবা সুলতানা রুবার ফ্ল্যাট থেকে সুরভিকে নিয়ে আফরোজা বেগম পঞ্চম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে যান। সেখানে কথা বলে সুরভিকে নতুন গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত করেন। এর মাঝেই বাচ্চু খারাপ আচরণ করে সুরভির সঙ্গে। এতে সে এই বাসায় কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। একপর্যায়ে বাচ্চু বাসা থেকে বের হয়ে গেলে সুরভিও চলে যেতে চায়। এ সময় গৃহকর্মী দিতি তাকে বাধা দিলে গেস্টরুমে দুই গৃহকর্মীর মধ্যে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে সুরভি রান্নাঘরে গিয়ে ফল কাটার বড় ছুরি নিয়ে এসে সেটি দিয়েই দিতির গলা, বুক ও পিঠে আঘাত করে।ads

হাতে ছুরি নিয়ে ঠা-া মাথায় পাশের ঘরে গিয়ে আফরোজা বেগমকেও বাসা থেকে চলে যাওয়ার কথা জানায় সুরভি। তিনি জানতে চান, দিতি চিৎকার করল কেন? সুরভি বলে, চলে যেতে চাওয়ায় দিতি বাধা দিয়েছে, তাই ঝগড়া হইছে। এ সময় আফরোজাও রেগে বলেন, তোকে তো বাচ্চুও যেতে নিষেধ করছে। এখন যেতে পারবি না, ও (বাচ্চু) এলে যাস। এ সময় সুরভি আফরোজা বেগমের ঘাড়ে, বুকে ও পিঠে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে সামনে থাকা একটি আইফোন ও আফরোজার হাতের স্বর্ণের বালা নিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে যায় সুরভি।

রক্তমাখা শরীরে চারতলায় নেমে একটি বাথরুমে হাত-পা ধুয়ে নিচে নামে। বাড়ির দারোয়ানকে ভুল বুঝিয়ে ৬টা ১০ মিনিটে ওই বাড়ি ছাড়ে সে। ভবনের অদূরে রক্তমাখা সেন্ডেল ফেলে চলে যায় মিরপুর; তারপর মহাখালী। এর মধ্যেই আইফোনটি চার হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেই টাকার বেশিরভাগই খরচ করে ফেলেছে বলেও জানিয়েছে সে।

গত রবিবার সন্ধ্যায় আগারগাঁও বস্তিতে আত্মগোপনের চেষ্টা করলে পত্রিকায় ছবি দেখে সুরভিকে পুলিশে তুলে দেয় স্থানীয় জনতা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার বাচ্চুও প্রথম থেকে অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন, তথ্য গোপন করেছেন। তিনি বলেছিলেন, সুরভিকে তিনি চিনতেন না। এক পান বিক্রেতার মাধ্যমে তার সঙ্গে সুরভির পরিচয় হয়। অথচ হত্যাকা-ের পাঁচ দিন আগেও বাচ্চুর সঙ্গে যে সুরভির কথা হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার আগে-পরে মোবাইল ফোনে ৫০টিরও বেশি কল আদান-প্রদান হয় তাদের মধ্যে।

তাদের মোবাইল কলের সূত্র ধরেই শনিবার ভোলার কালুপুরে সুরভির গ্রামের বাড়িতে তার পরিবারের সন্ধান পায় পুলিশ। স্বজনদের দিয়ে যোগাযোগ করানো হয় সুরভির সঙ্গে। এই ফোনকলের সূত্র ধরেই রবিবার সন্ধ্যার পর আগারগাঁও এলাকায় সুরভির সন্ধান মেলে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি জানান, সুরভির হত্যার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, বাসা থেকে বের হতে না দেওয়ায় দুজনকে একাই হত্যা করেছে সে। তার বক্তব্য শুনে তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। আবার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভানও করতে পারে। মামলাটি বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, ৩ বছর আগে নিহত আফরোজা বেগমের বাসার পাশের পানের দোকানদার সুমনের সঙ্গে সুরভির পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় ঢাকার একটি শপিংমলে সুরভি ক্লিনার হিসেবে কাজ শুরু করে। কিছুদিন মিরপুরের একটি গার্মেন্টেও কাজ করে সে। সুরভি তার বড় বোনকে নিয়ে আগারগাঁও বিএনপির বস্তিতে ভাড়া থাকত। সংসারে টানাপড়েনের কারণে পান দোকানি সুমনকে সুরভি জানায়, যে কোনো বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেও সে রাজি আছে। এর সূত্র ধরে নিহতের জামাতার গাড়িচালক বাচ্চু সুরভিকে ওই বাসায় নিয়ে যায়।

ঘটনার দিন দুপুরের পর ওই বাসায় আর কাজ করতে না চাওয়ার কথা জানাতে বাচ্চুকে একাধিকবার ফোন দেয় সুরভি। কিছুক্ষণ পর বাচ্চুর ফোনটি বন্ধ পায় সে। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একপর্যায়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ফ্ল্যাটের দরজায় তালা মারা দেখে সুরভি। এ সময় আফরোজা বেগমমের কাছে দরজার চাবি চায় সে। কিন্তু তিনি চাবি না দিয়ে তাকে বকাঝকা করেন। অন্য গৃহকর্মী দিতিও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে বিকালে দুজনকেই হত্যা করে ফ্ল্যাট ছাড়ে সে।

Comment here