নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করার কথা থাকলেও কবে নাগাদ সেই ল্যাব চালু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি দুই মন্ত্রী। আজ মঙ্গলবার বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেননি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এ সময় বিমানবন্দরে তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শর্ত অনুযায়ী, দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে যাত্রীদের বিমানবন্দরে করতে হবে করোনা পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষার জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পার্কিং ভবনের ছাদে ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আপত্তি জানিয়েছে ল্যাব স্থাপনে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। এই সংকট নিরসন ও নতুন স্থান নির্ধারণের বিষয়ে বিমানবন্দরে এসেছিলেন এই দুই মন্ত্রী।
মন্ত্রীরা জানান, ছাদে ল্যাব স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে সাময়িকভাবে বিমানবন্দরের ভিতরেই ল্যাব স্থাপন করা হবে। তবে কবে নাগাদ ল্যাব চালু হবে, ফ্লাইট শুরু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তারা।
কবে নাগাদ বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষাগার চালু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো এক সপ্তাহ আগে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় একটু সময় লাগছে। এই সমস্যার আজ মোটামুটি একটা সমাধান হয়েছে।’
‘সংযুক্ত আরব আমিরাত চেয়েছে বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট, এদিকে আমাদের দেশে র্যাপিড পিসিআর পরীক্ষার যন্ত্র নেই,’ বলেন ইমরান আহমেদ।
বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার আরটি-পিসিআর ল্যাব বসাতে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মানসম্মত কিনা তা যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে। আরব আমিরাতে পাঠানো এসওপি প্রসঙ্গে ইমরান আহমেদ বলেন, এ বিষয়টি সিভিল এভিয়েশনের কাজ, এটা প্রবাসী কল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার বিষয় নয়। এটা তারা কোথায় পাঠিয়েছেন, কোথায় ক্লিয়ারেন্স পাবেন সেই ভিত্তিতে সিভিল এভিয়েশন কাজ করে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আগের সিদ্ধান্ত ছিল সাতটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষাগার করতে দেওয়া হবে। টেকনিক্যাল কমিটি সিলেকশন করেছে। এটা আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, এর পরে সেটি আমরা সিভিল এভিয়েশনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আপাতত আরটি-পিসিআর ল্যাবের কাজ দিচ্ছি, পরে র্যাপিড পরীক্ষাও আমরা বিবেচনায় নিব। এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমি এখনো বলতে পারছি না।’
ছাদে ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে ইমরান আহমেদ বলেন, ‘বিমানবন্দরে পার্কিংয়ের ছাদ তৈরি করতে ১০ দিন লাগবে। বিমানবন্দরের ভেতরেও জায়গায় আছে, সেখানে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কাজ হবে। যারা কাজ করবে বলেছিল‑ তারা যদি এখন বলে যন্ত্র নেই, আমদানি করতে হবে, তাহলে আমি বলবো বাড়িতে চলে যাও। অঙ্গীকার অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে ল্যাব বসাতে হবে।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য লাগবে পরীক্ষাগার, সেই পরীক্ষাগার বসাতে জায়গা লাগবে। দ্রুত এই কাজ শুরু করার জন্য বিমানবন্দরের ভিতরে একটি জায়গা দেওয়া হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে, তারা আপাতত ছোট আকারে সেখানে পরীক্ষাগার বসাবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিংয়ের ছাদে স্টিলের কাঠামো করে পরে করোনার আরেকটি পরীক্ষাগার বসানো হবে। সেই জায়গা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে। এটা করতে হয় তো একটু সময় লাগবে।’
কবে নাগাদ ল্যাব চালু হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে কাজ ছিল, সেটি মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়েছে। আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে দিয়ে দিয়েছি। আমরা যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নাম প্রস্তাব করেছিলাম সে কয়টি তারা নির্বাচিত করেছেন।’
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘করোনার পরীক্ষাগার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে হয়েছে। এ কারণে নতুন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর আবার দিতে হবে কিনা আমি নিশ্চিত না।’
বিমানবন্দরের ভিতরে জায়গা প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভিতরের জায়গা ছোট। পরীক্ষাগার বসানো হলে আমরা বুঝতে পারবো কয়টা বুথ বসিয়ে কতজনকে একসঙ্গে পরীক্ষা করা যাবে।’
উল্লেখ্য, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার আরটি-পিসিআর ল্যাব বসানোর জন্য সাত প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব করা সাত প্রতিষ্ঠানকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সারওয়ার আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠান সাতটি হলো : স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড ঢাকা, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড ও ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক।
Comment here