ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে মিরপুর রণক্ষেত্র - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে মিরপুর রণক্ষেত্র

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রবিবার মিরপুরে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেছে চালকরা। বেলা ১২টার দিকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এক পর্যায়ে তা আশপাশের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল সোয়া চারটার দিকে কালশী ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তাদের সরিয়ে দিতে বিকালে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে মিরপুর এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে মিরপুরের কালশী, আগারগাঁও এবং মিরপুর ১ ও ১১ নম্বর এলাকায় কয়েকশ অটোরিকশাচালক বিক্ষোভ শুরু করে। তারা মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কয়েকটি রিকশা ও বাস ভাঙচুর করা হয়।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির বলেন, রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধের কারণে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তাদের কয়েকবার সড়কটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও তারা মানেনি। তারা বাস ভাঙচুর করে। সাধারণ রিকশাচালক ও যাত্রীদের আক্রমণ করে। এ সময় পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বললে, তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

আফজাল নামে এক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক বলেন, তারা বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিয়ে অটো চালান। ঋণ করে অটো কিনেছেন। এখন হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অটোরিকশা বন্ধ হয়ে গেলে ঋণের কিস্তি দিতে পারব না। পরিবারের খাবারও জুটবে না।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে কালশী মোড়ে অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশের বক্সে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান বলেন, কালশীতে আন্দোলনকারীরা সহিংস আন্দোলন করছে। তারা কালশী মোড়ে অবস্থিত একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছে।

মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর মিরপুর এলাকা থেকে অটোরিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে অটোরিকশাচালকরা মিরপুর-১০ গোলচত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এরপর মিরপুর-১০ নম্বর থেকে সরে গিয়ে তারা কালশীতে যেয়ে আগুন দিয়েছে। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর পৌনে ৩টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আসেন ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা। তিনি আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে চালকদের একটি অংশ আন্দোলন শেষ করে ফিরতে সম্মত হয়। তবে শেওড়াপাড়া থেকে আসা শ্রমিকদের একাংশ লাঠি হাতে হৈ-হুল্লোড় করে এসে আবারো অবরোধ শুরু করে।

মিরপুরে সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও পথচারী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত সাগর (২৩) নামে এক পথচারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি একটি পাঞ্জাবির কারখানায় চাকরি করেন।

এদিকে, রবিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়ক অবরোধ করে রাখে অটোচালকেরা। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে মাঝে মধ্যে দূরপাল্লার কিছু যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হয়। ডেমরা থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা কৌশলে আমাদের কাজ করছি। সহনশীল পর্যায়ে বিনা বিশৃঙ্খলায় সড়ক থেকে চালকদের ফিরিয়ে দিয়েছি। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা : দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান এবং এ ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছিলেন, ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Comment here