ভারত মহাসাগরের নিচে রয়েছে বিশাল গর্ত। সমুদ্রের মেঝেতে অনেকটা এলাকাজুড়ে তার বিস্তৃতি। দীর্ঘদিন ধরেই এ গর্তটি বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের কেন্দ্রে রয়েছে। শ্রীলংকার ঠিক দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের নিচের এই গর্তটিকে ‘গ্র্যাভিটি হোল’ বা ‘মাধ্যাকর্ষণজাত গর্ত’ বলা হয়ে থাকে।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানের কারণে গর্তটি তৈরি হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন। আনন্দবাজার।
এই গর্ত থেকে আগামী দিনে পৃথিবীর ওপরিভাগের কোনো ক্ষতি হতে পারে কিনা, বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে এ গর্তের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল মহাকর্ষ বলের টানে সমুদ্রতলের কোনো অংশ নিচের দিকে বসে গেলে ‘গ্র্যাভিটি হোল’-এর সৃষ্টি হয়। ভারত মহাসাগরের নিচেও তা হয়েছে।
গবেষকদের দাবি, পৃথিবীর আকার একটি নিখুঁত গোলকের মতো বলে মনে করা হলেও আসলে পৃথিবী তেমন নয়। পৃথিবীপৃষ্ঠ কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু, কোনো অংশ একটু বেশি সমতল। ভারত মহাসাগরে তৈরি ‘গ্র্যাভিটি হোল’ আক্ষরিক অর্থে তেমন ‘গর্ত’ নয়, যা সমুদ্রের পানি কমিয়ে দেয় বা শুষে নেয়। বরং এটি ভূত্বকের একটি অসঙ্গতিপূর্ণ স্থান, যেখানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টান অপেক্ষাকৃত দুর্বল।
গবেষকেরা কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠটিকে বিশ্লেষণ করেছেন। মাধ্যাকর্ষণজাত এই গর্তকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারা। ১৪ কোটি বছর ধরে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূপ্রকৃতিগত পরিবর্তন বিবেচনা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, এই ‘গ্র্যাভিটি হোল’-এর কারণে পৃথিবীর মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় পাতগুলো কিছুটা সরে গিয়েছে।
ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ টানের কারণ হিসাবে ভূত্বকের নিচে পৃথিবীর ম্যান্টেল স্তরের গলিত ম্যাগমাকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ম্যাগমাই দুই কোটি বছর আগে পৃথিবীর আকৃতি গড়ে দিয়েছিল।
ভূত্বকের নিচ দিয়ে দুই কোটি বছর ধরে বয়ে চলেছে এই তরল তপ্ত ম্যাগমা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ম্যাগমার স্রোত যদি কখনো থমকে যায়, ভারত মহাসাগরের তলদেশে তৈরি হওয়া গর্তটিও মিলিয়ে যাবে।
বাইরে থেকে দেখে ভারত মহাসাগরের তলদেশে গর্তের উপস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। এই ‘গ্র্যাভিটি হোল’ নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা চলছে। আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও নতুন তথ্য, নতুন ভাবনা উঠে আসতে পারে।
Comment here