মদপানে মৃত্যু, তবু পাশে গেলেন না ভাই - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

মদপানে মৃত্যু, তবু পাশে গেলেন না ভাই

আজিজুর রহমান,চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বিষাক্ত মদপানে খলিলুর রহমান (৪০) ও সুবল সর্দার ওরফে রাঙি (৪৫) নামের দুই ট্রাকচালকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শরিফুল নামের একজন এখনো অসুস্থ রয়েছেন।

সুবল চৌগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আদিবাসীপাড়ার হরেন সর্দারের ছেলে। আর খলিল পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোট হারজি গ্রামের আবদুল মকছেদের ছেলে। তিনি শহরের ভাস্কর্য মোড়ের একটি টিনশেড বাড়িতে মাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ভাড়া বাড়িতে খলিলের মৃত্যু হয়। আর সুবল ওরফে রাঙিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে চৌগাছা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।

এদিকে খলিলের পাশের বাড়িতেই থাকেন আপন বড়ভাই জামাল উদ্দিন। বিকেলে খলিলের মৃত্যু হলেও তিনি করোনায় মারা গেছেন ভয়ে ওই বাড়ির ত্রিসীমানায় যাননি জামাল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা কান্নাকাটি করছে, যেতে নিষেধ করছে। তাদের নিবৃত্ত করতে না পেরে ভাইয়ের লাশের কাছে যাইনি।’

পরে সন্ধ্যা ৬টায় চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, চৌগাছা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. উত্তম কুমার, থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অগ্রযাত্রার আহ্বায়ক ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান হাসিব ও আমাদের সময়র এই প্রতিবেদক ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন, ওই ব্যক্তির বৃদ্ধ মা লাশটি নিয়ে বসে আছেন।

পরে ডাক্তার লাশটি পর্যবেক্ষণ করে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে মতামত দেন। তিনি লাশ দাফনের অনুমতি দেন এবং পৌর কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শনিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত লাশটি গোসল দেওয়ার কাউকে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অগ্রযাত্রার স্বেচ্ছাসেবক আবদুর রশীদ রাজু লাশের গোসল দিয়ে দিতে এগিয়ে আসেন।

এদিকে পৌর মেয়র ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অগ্রযাত্রার সহায়তায় কবর খোড়া হয়। এমন সময় খবর আসে ওই ব্যক্তির (খলিলুর) সঙ্গে বসে মদ্যপান করা সুবল সর্দার ওরফে রাঙিও মারা গেছেন। তখন চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব সিদ্ধান্ত দেন দুটি লাশেরই ময়নাতদন্ত করা হবে।

খলিলের মা জানান, শনিবার ভোররাতের দিকে খলিলের কয়েকবার পাতলা পায়খানা হয়। পরে দিনেও কয়েকবার পাতলা পায়খানা হয়। দুপুরে কয়েকবার বমি করেন তিনি। এরপর বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে সুবলের বড়ভাই বলরাম সর্দার জানান, তার ভাই শনিবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চৌগাছা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে গ্যাস্টিকের ওষুধ দেওয়া হয়। তার বাথরুম না হওয়ায় সাপোজিটরিও দেওয়া হয়। তাতেও কিছু হয়নি। রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবারও হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

তবে তাদের সঙ্গে মদ্যপান করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন চালক জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে অন্য কয়েকজন চালকের সঙ্গে মারা যাওয়া দুজন বেশি মাত্রায় বিষাক্ত মদপান করেন। তাদের মধ্যে উপজেলার পুড়াহুদা গ্রামের আরেক ব্যক্তিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তারা আরও জানান, সুবল সর্দার ওরফে রাঙি ও তার ভাই বলরাম সর্দার উভয়েই এই মদের ব্যবসা করেন। তারা যশোর মাড়োয়ারি মন্দির এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই মদ ও স্পিরিট কিনে চৌগাছায় বিক্রি করে থাকেন বলেও দাবি করেন তারা।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে যশোরের একজন বিক্রেতার কাছ থেকে মদ খেয়ে চৌগাছার দুজনসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ওই বিক্রেতা হাসানকে আটক করেছে এবং ওই দোকানের মদের স্যাম্পল নিয়েছে।

এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন, ‘দুটি লাশই ময়নাতদন্ত করা হবে। রোববার সকালেই লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার আগে সঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না।’

Comment here