মশা বাড়ছে, এখনই উদ্যোগ জরুরী - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

মশা বাড়ছে, এখনই উদ্যোগ জরুরী

 মাজহার মান্নান : পৃথিবীতে যত ধরনের কীট আছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে মশা। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সবই বহন করে এবং এর কামড়ের মাধ্যমে এগুলি ছড়ায়। এখন পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশার সন্ধান পাওয়া গেছে। মশা ১৫ টি ভয়ংকর রোগ ছড়ায়। এদের মধ্যে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ও ইয়েলো ফিভার অন্যতম। মশার প্রকোপ এতটাই বেশি যে প্রতি বছর ২০ আগস্ট পালিত হয় মশা দিবস। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বছরে বিশ্ব প্রায় ৭০ কোটি মানুষ মশা বাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। গত ৩০ বছরে ডেঙ্গুর হার বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ।

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ থাকে না এমন মানুষ এদেশে খুঁজে পাওয়া দূরুহ। শীতের আগমন ঘটছে। ইদানিং মশার উৎপাত কিছুটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মশার বিস্তার রোধে বহুমুখী পদক্ষেপ এখনই নেয়া জরুরী।
একটি স্ত্রী মশা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত বংশ বিস্তার করতে পারে। সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মশার প্রজনন বেশি হয়। মশায় আক্রান্ত একটি ভাইরাস থেকে চার ঘন্টায় ১০০ থেকে প্রায় এক হাজার ভাইরাস জন্ম নেয়। একটি স্ত্রী মশা সাধারণত ৫ থেকে ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচে। এই সময়ের মধ্যে একটি স্ত্রী মশা তিন থেকে চার বার প্রজনন করে থাকে।।  মশা তার জীবনচক্রের প্রথম ২ সপ্তাহ সাধারণত পানিতে কাটায়। এরা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মশার জীবনচক্র চারটি পর্যায়ে হয়ঃ ডিম, শূক, মূককীট, আর পূর্ণাঙ্গ মশা। পূর্ণাঙ্গ নারী মশা বদ্ধ পানিতে ডিম  পাড়ে।

আমরা সবাই মশা নিধনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। কিন্তু একটি বিষয় আমরা নজর কম দেই। আর তা হল মশার লার্ভা। এই লার্ভা ধ্বংস না করতে পারলে কোনমতেই মশার নিধন সম্ভব নয়। লার্ভা নিধন সবচেয়ে জরুরী। আর এর জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।

আমরা নানা উপায়ে মশার কামড় থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করে মশা তাড়াই। কিন্তু এ দুটিই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য। মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোটা নিরাপদ। মশা নিধন করতে হলে মশার উৎপত্তি,  বিকাশ ও প্রজনন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। মশার বিস্তারের পিছনে বড় কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পরিবেশ দূষণ, ঘনবসতি, জনসংখ্যার আধিক্য, অসচেতনতা, আবর্জনা, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন, জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন, জলবায়ুর পরিবর্তন, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, অনিয়মিত মশক নিধন প্রক্রিয়া। যে কারণগুলি উল্লেখ করলাম এগুলির সবকটিই এদেশে প্রবল। কাজেই মশা খুব দ্রুত বিস্তার করে। মশার কামড়ে যে শুধু অসস্তি লাগে তাই নয়, বরঞ্চ এর কামড়ে নানা প্রকাশ রোগ বিস্তার লাভ করে। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর সহ নানা জটিলতা দেখা দেয় শরীরে। মশা নিধনের কাজটি মুখে যত সহজে বলা যায় বাস্তবে তা সম্ভব নয়। মশা নিধন করতে হলে কতকগুলি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবেঃ ১. নমুনা সংগ্রহ করা ২. লার্ভা সনাক্ত করা ৩. প্রজনন বন্ধ করা ৪. কার্যকরী ঔষধ ছিটানো ৫. পরিবেশ পরিষ্কার রাখা ৬. জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ৭. অতিরিক্ত কীট নাশকের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া ৮. পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিরাপদ করা।

আমরা সাধারণত দেখি যে মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে কিছু ঔষধ ছিটিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ। শুধু ঔষধ ছিটিয়ে মশা নিধন আদৌ সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিকূল পরিবেশেও মশার টিকে থাকার সক্ষমতা বেড়েছে। অর্থাৎ আগে যে সাধারণ ঔষধে কাজ হতো, এখন আর তা হচ্ছে না।
ডেঙ্গু নিধনে বর্তমানে উবাকিয়া পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। বদ্ধ বা জমা পানিতে কেরোসিন বা মবিল ঢেলেও মশক নিধন করা যায়। তবে পদ্ধতিটি স্বাস্থ্য সম্মত নয়। তাহলে মশা কিভাবে নিধন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে মশার ডিমকে যদি ধ্বংস করে দেয়া যায় তাহলে খুব সহজেই মশা নিধন করা সম্ভব। সরকারের একার পক্ষে মশক নিধন কখনোই সম্ভব নয়। পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। সবাই সচেতন না হয়ে শুধু কারও উপর দায় চাপিয়ে দিলেই কাজ হবে না। তাই রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
প্রবাদে আছে মশা মারতে কামান দাগা। কথাটির মাঝে কঠিন সত্য লুকিয়ে আছে। মশা মারতে হয়তো কামান দরকার হয় না, কিন্ত কামানের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী পরিকল্পনা দরকার হয়। একমাত্র সঠিক পরিকল্পনা তার সেটার সঠিক বাস্তবায়নই পারে মশার বিস্তার রোধ করতে।

Comment here