মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭০ বছর পূর্তি হচ্ছে আগামীকাল রবিবার। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এবার সারাদেশে মাসব্যাপী উৎসব করবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি। রাজধানী ঢাকায় মূল অনুষ্ঠান হবে তিন দিনের। এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সব কর্মসূচিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে তৃণমূল ও তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের।
এ জন্য বিশেষ পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নামে চাঁদাবাজি ও জনভোগান্তি যেন না হয়, সে জন্য দলের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেলও কাজ করবে। কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী দিন (২৩ জুন) সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পর ধানমন্ডি ৩২-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং সভাপতি হিসেবে দলের জাতীয় নেতাদের নিয়ে পৃথকভাবে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ আমাদের সময়কে জানান, আয়োজনের দ্বিতীয় দিন বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনাসভা হবে।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এতে দলের জাতীয় নেতারাসহ বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য রাখবেন। ২৫ জুন বিকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটির আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়া এই তিন দিনই আওয়ামী লীগের সূতিকাগার পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন, হাতিরঝিল, ঢাকায় দলের পুরনো অফিস ওয়ারীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৯১ নম্বর বাড়িটিসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় কনসার্ট ও সাউন্ড অ্যান্ড লাইটিং শো হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিশেষ সভা করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উদযাপন উপলক্ষে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এবারের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর কর্মসূচি আমরা বর্ণিলভাবে উদযাপন করতে চাই। মাসব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে ২৩ জুন থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, এসব অনুষ্ঠানে তা বিশেষভাবে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যে তৃণমূলে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা এবং ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুরান ঢাকার হৃষিকেশ দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানি জান্তাদের বৈরী শাসনের জাঁতাকলে এ দলটিই হয়ে উঠেছিল শোষিত-নিপীড়িত বাঙালির ভরসাস্থল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দলটি হয়ে উঠেছিল গণমানুষের দল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিলেন।
সেদিনই দেশের আনাচে-কানাচে শুরু হয়েছিল সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বর আক্রমণের পর ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার, যার প্রধান করা হয়েছিল কারান্তরীণ বঙ্গবন্ধুকে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয় গুলিস্তানে, ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে। ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে সেখানে নিজস্ব ১০তলা কার্যালয় ভবন উদ্বোধন করেন দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Comment here