মৃত্যুপুরী নিউইয়র্কের ভয়াল বর্ণনা দিলেন তরুণী - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
আন্তর্জাতিক

মৃত্যুপুরী নিউইয়র্কের ভয়াল বর্ণনা দিলেন তরুণী

অনলাইন ডেস্ক ; পৃথিবীর বুকে নাকি শ্রেষ্ঠ শহর নিউইয়র্ক! যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাই-ই বলে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে রাজ্যের চেহারা যেভাবে বদলেছে তাতে এই শ্রেষ্ঠ শহরে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ।

করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় নিউইয়র্কে বাড়ছে লাশের সারি। জায়গায় জায়গায় লাশের গাড়ি দাঁড়িয়ে, চারিদিক ফাঁকা। রাতের বেলা তো অবস্থা আরও ভয়াবহ।

ইতালি, স্পেন, চীনের মতো মৃতের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রেও। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে ভিডিও মাধ্যম স্কাইপে অ্যালিক্স মন্টেলিওন নামের এক তরুণী তার অভিজ্ঞতা জানান। এ সময় পাশে ছিলেন তার প্রেমিক মার্ক কজলো।

তারা বলেন, বাইরে বের হওয়ার কথা ভাবছেন না তারা। নিজেদের প্রিয় শহরটা দিন দিন কেমন হয়ে আসছে দেখতে জানালার বাইরে চোখ রেখেছিলেন তারা। মন্টেলিওন বলেন, ‘আমরা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিহঙ্গ দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি শহরটাকে।’

উইকওফ হাইটস মেডিকেল সেন্টারে যা ঘটছে তাও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন মন্টেলিওন ও কজলো। মন্টেলিওন বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি বাইরে খুব চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে, যা থেকেই ধারণা করতে পারি ভেতরের পরিস্থিতি কতটা খারাপ। কত লাশ ওখান থেকে বেরিয়ে এলো তা গোনা এখন ছেড়ে দিয়েছি। এটা খুবই ভয়াবহ দৃশ্য, ভালো লাগে না। কিন্তু এটাই বাস্তব। এ শহরের সঙ্গে এ ছবি বড়ই বেমানান। পুরো ঘটনাটাই ধরা পড়ছে আমাদের চোখে।’

মন্টেলিওন রয়টার্সকে আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহে কজলো কুকুরকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি মন্টেলিওনকে ফোন করে জানায়, দুজন চিকিৎসক সেখানে ট্রাক আসার কথা বলছেন। এর পরই মন্টেলিওন জানালা খুলে সেই দৃশ্য দেখতে পান। এর পর দিন সকালে উঠে তারা দেখতে পান, রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থাসহ দুটি ট্রাক ঢোকার জন্য র‌্যাম্প তৈরি করছেন কর্মীরা। ওরা যেটা ফোনে বলছিলেন, সেটাই গোটা শহর জুড়ে ঘটে চলেছিল। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো সারি সারি লাশ।’

মন্টেলিওনের ভাষায়, চারপাশে হতাশার ছবি। তবে এর মধ্যেও বেঁচে রয়েছে নানা সম্পর্ক। সেই দৃশ্যও ধরা পড়েছে। আশপাশের মানুষদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন উইকঅফ হাইটস মেডিকেল সেন্টারের প্রধান র‌্যামন রডরিগেজ।

তার প্রশংসা করে মন্টেলিওন বলেছেন, ‘প্রতিদিন আমার আত্মীয় ও শহরকর্মীরা আমাদের এই শহর ছাড়তে বলছে। তারা মনে করছেন, এ শহর এখন আমাদের জন্য ঠিক নয়।’ কিন্তু আশাবাদী শহর নিউইয়র্ক, তাই নিজ শহরেই ভরসা রাখছেন মন্টেলিওন ও কজলো।

প্রসঙ্গত, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব জেঁকে বসায় দেশটির রেকর্ড ভেঙেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১ হাজার ৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৯১ জন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে সর্বমোট সংক্রমিত হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির নিউইয়র্ক শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কেবল নিউইয়র্কেই মারা গেছেন ৫১৮ জন। এ ছাড়া শহরটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৫২১।

নিউইয়র্ক শহরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮৭ হাজার ৭২৫ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৪ হাজার ৭৭৮ জন।

দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, শুধুমাত্র নিউইয়র্ক সিটিতেই এখন পুরো চীনের থেকে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। চীনে করোনাভাইরাসে ৮১ হাজার ৯০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৬ জনের।

Comment here