গাজীপুর প্রতিনিধি : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে তার মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শুনিয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার সকালে বন্দী এটিএম আজহারুল ইসলামকে এ পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়। এর আগে গতকাল সোমবার গভীর রাতে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানাটি কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, আইন অনুযায়ী এটিএম আজহারুল ইসলাম ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। তিনি তার আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তার সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে এই আবেদন না করলে যেকোনো দিন রায় কার্যকর হতে পারে।
আজহারুল ইসলাম যদি রিভিউ আবেদন করেন এবং তা খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন। তিনি যদি প্রাণ ভিক্ষা না চান এবং চেয়েও যদি ক্ষমা না পান তাহলে রায় কার্যকরের ক্ষণগণনা শুরু হবে। রায় কার্যকরের আগে তিনি শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন।
রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে দণ্ড পরিবর্তন হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সকল আসামি রিভিউ আবেদন করেও রায় বদলাতে পারেনি।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও অন্য অভিযোগে তাকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছরের ৩১ অক্টোবর তার সেই সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গত রোববার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানোর পর তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপরই মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো হয়।
এটিএম আজহারুল ইসলাম একাত্তরে ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর রংপুর এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে লুটপাট-অগ্নিসংযোগসহ বর্বরতা চালানো হয়। রায়ে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পাঁচটি এবং পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে অন্তত এক হাজার ৪০০ জনকে হত্যা ও নিজেই ১৪ জনকে খুনের অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ১১৩ যুক্তিতে খালাস চেয়ে ২ হাজার ৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল করেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। এরপর ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট এক আদেশে আপিল বিভাগ আসামিপক্ষকে সারসংক্ষেপ দাখিলের নির্দেশ দেন। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর গত বছলের ১৮ জুন সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি শুরু হয়ে ১০ জুলাই শেষ হয়।
এটিএম আজহারুল ইসলামকে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
Comment here