মেট্রোরেলে চড়ার অপেক্ষায় মানুষ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

মেট্রোরেলে চড়ার অপেক্ষায় মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ২৮ ডিসেম্বর সকালে উদ্বোধন হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী মেট্রোরেল আগারগাঁও থেকে যাবে দিয়াবাড়ীতে। ‘উত্তরা উত্তর’ নামে স্টেশনটি পরিচিত। উদ্বোধনী ট্রেনে থাকবে দুটি জাতীয় পতাকা। প্রধানমন্ত্রী প্রথম টিকিট কেটে ট্রেনে চড়বেন। প্রথম ট্রেনটি চালাবেন একজন নারী চালক। সে ক্ষেত্রে দায়িত্ব পেতে পারেন মরিয়ম আফিজা।

উদ্বোধন উপলক্ষে দিয়াবাড়ী এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের সড়কে দিনরাত চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। পদ্মা সেতুর মতো দেশব্যাপী মেট্রোরেল উদ্বোধনের প্রস্তুতি না থাকলেও রোকেয়া সরণিসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে থাকবে ব্যানার-ফেস্টুন। সড়ক বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। সরেজমিন আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, পল্লবী, উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘষামাজার কাজ চলছে। শেওড়াপাড়া স্টেশনের পশ্চিম পাশে লিফট স্থাপন চলছে। কাজিপাড়ায় সিঁড়ির গোড়ায় চলছে ফুটপাতের সংস্কার। শেওড়াপাড়ায় লিফটের কাঠামো বসে গেছে। কাজিপাড়ায় নির্মাণকাজ শেষ। এ দুই স্টেশনেই সিঁড়ির পাশেই দোকানপাট। সিঁড়ি ও দোকানপাটের মধ্যে এক থেকে দেড় ফুট জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে। এতে পথচারীর চলাচলে সমস্যা হবে দাবি করে আপত্তি জানিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের চেয়ে ফুটপাত এক মিটার প্রশস্ত হয়েছে। মেট্রোরেল চালুর পর স্টেশনের নিচে পথচারী ও গাড়ি কমবে।

উদ্বোধনের পর দিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন সাধারণ মানুষ। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন উত্তরা উত্তর থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজিপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ট্রেনে সর্বমোট ২৩০৮ যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হলেও প্রাথমিকভাবে ২০০ যাত্রী তোলা হবে। প্রথম তিন মাস এভাবে চলতে পারে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক গতরাতে আমাদের সময়কে বলেন, সকালে ও বিকালে ট্রেন চলবে। শুরুর দিকে ২০০ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। এর কারণ হচ্ছে- যাত্রীদের অভ্যস্ততা নেই। ইতোমধ্যে আমরা উত্তরা স্টেশনে নিয়ে যাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরও দেখেছি তারা অনেক কিছু বুঝতে পারছেন না। রপ্ত করতে সময় লাগবে। তাই ধীরে ধীরে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ানো হবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, দৈনিক ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারার কথা। ছয়টি মেট্রোরেল লাইন চালু হলে দৈনিক ৫০ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। শুরুতে সব স্টেশনে থামবে না মেট্রোরেল। প্রথম দিকে এই রুটের ৯টি স্টেশনের তিনটি দিয়াবাড়ী, পল্লবী ও আগারগাঁওয়ে যাত্রী উঠানামা করবে। মাঝের স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামানোর কার্যক্রম শুরু হবে পরে। এর কারণ হচ্ছে যাত্রীর অনভ্যস্ততা। পর্যায়ক্রমে যাত্রী সংখ্যা বাড়ানো হবে। এটিই বৈশি^ক চর্চা। শুরুর দিকে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। প্রতিটিতে যাত্রী উঠতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন। আর মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটর কার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সেখানে প্রতিটিতে চড়তে পারবেন ৩৯০ জন।

প্রথম দিকে সকালে কিছুক্ষণ, আবার বিকালে কিছুক্ষণ ট্রেন চলবে। সব মিলিয়ে দিনে চলবে পাঁচটি ট্রেন। যদিও একটা সময় প্রতি চার মিনিট পর পর ট্রেন চলার কথা রয়েছে। উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশনে যাত্রীরা চাইলে নিজের গাড়ি একেবারে স্টেশনের সিঁড়ি বা লিফটের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারবেন। এ ছাড়া বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশা আসা যাত্রীরাও স্টেশনের কাছে এসে নামতে পারবেন।

সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। দূরত্বভেদে ভাড়া ভিন্ন হবে। স্থায়ী কার্ড কিনে মেট্রোরেলের টিকিট কাটা যাবে। এর জন্য সময় সময় টাকা ঢোকাতে (রিচার্জ) হবে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে স্টেশন থেকেও টিকিট কাটা যাবে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল বা কমলাপুর পর্যন্ত অংশের কার্যক্রম চালু হবে পরবর্তী সময়ে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোতে চড়ে আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তর (উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোর কাছে) স্টেশনে গিয়ে নামবেন। সেখানে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রধানমন্ত্রী আবার মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও চলে আসবেন। ট্রেন থাকাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবেন ও ছবি তুলবেন।

মেট্রোরেলে উদ্বোধন প্রস্তুতিতে গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে সচিবালয়ে বৈঠক হয়েছে। এতে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী অংশ সাজানো হবে। দিয়াবাড়ীতে স্টেশনের ৩০০ মিটারের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। জনবল সংকট ও অপ্রতুল প্রস্তুতির কারণে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কয়েক দফা বিরতি দিয়ে চার ঘণ্টা পর পর ট্রেন পরিচালনা করা হতে পারে। আপাতত কোন কোন সময়ে ট্রেন চলবে, সে বিষয়ে আজ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।

 

Comment here