ম্যাডামকে দেখলে আপনারা চিনতেই পারবেন না - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

ম্যাডামকে দেখলে আপনারা চিনতেই পারবেন না

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী। সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, ‘আপনারা ম্যাডামকে দেখলে এখন চিনতেই পারবেন না।’

আজ শুক্রবার বিকেলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার ‘টাং আলসার’ এবং ‘ব্লাড সুগার’ ২০-এর নিচে না নামাসহ শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফখরুল। এই অবস্থায় অবিলম্বে তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জিবে আলসার হয়েছে। গত এক সাপ্তাহে তার ওজনও কমে গেছে। তার ৪ কেজি ওজন গত এক সাপ্তাহের মধ্যে কমেছে। ইট ইজ ভেরি এলার্মিং। আপনারা (সাংবাদিকরা) ম্যাডামকে দেখলে এখন চিনতেই পারবেন না। উনি শুঁকিয়ে এ রকম হয়ে গেছেন। উনি খেতে পারছেন না, কিছুই খেতে পারছেন না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে যেখানে তিনি চিকিৎসা করাতে চান, সেখানে তার চিকিৎসার করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’

গত ১ এপ্রিল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী রয়েছেন তিনি।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘হুইল চেয়ার ছাড়া তিনি মুভই করতে পারছেন না। প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ। তিনি এখন বিছানা থেকে নিজে উঠতে পারেন না। তাকে দুজনের সাহায্যে করে উঠাতে হয় এবং হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে টয়লেটে, ওয়াসরুমে বা খাবার টেবিলে নিতে হয়। আবার দুজনের সাহায্য নিয়েই তাকে শোয়া বা বিছানায় নিতে হয়। এটা অমানবিক। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন, যে দুইবার বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং যিনি নিজে তার দুই সন্তানসহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী ছিলেন। আজকে চরম অমানবিক আচরণ তার সঙ্গে করা হচ্ছে। একজন প্রথম শ্রেণির প্রাপ্ত কয়েদীর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়, তার সঙ্গে তার চেয়েও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘দেশনেত্রীর যে খাওয়া সেগুলো তাকে ঠিকভাবে দেওয়া হয় না। তার যে সমস্ত ফল-মূল, যেগুলো খাওয়া উচিত সেগুলো তিনি ঠিকমত পান না। সবচেয়ে বড় হচ্ছে, তার চিকিৎসা। এটা কোনো মতেই এখানে (বিএসএমএমইউ) সম্ভব হচ্ছে না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রী সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন তার জিহ্বার মধ্যে আলসার হয়েছে, যেটাকে টাং আলসার বলে। অন্যদিকে দাঁত চোখা হয়ে যাওয়ায় জিবে আঘাত করলেই তিনি কষ্ট পান। এ কারণে খেতেও পারছেন না। চিকিৎসকরা টুথ ব্রান্ডিং করেছিলেন, যাতে দাঁতের সার্পনেসটা কমিয়ে এনেছিলেন। এখন আরও বেশি করে দেখা দিয়েছে। তার রুট ক্যানেল, স্কেলিং, টুথ এসট্রাকংশ করা দরকার। বয়সের কারণে দুই-একটা দাঁত তার নষ্ট হয়ে গেছে,  সেগুলো তুলে ফেলা দরকার।’

খালেদা জিয়ার ‘ব্লাড সুগার’ ইনসুলিন নেওয়ার পরও নামছে না বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি ডায়াবেটিকসের তিনটা ওষুধ খাচ্ছেন, তারপরও কিছুইতে তা ২০-এর নিচে নামছে না। যেটা অত্যন্ত এলার্মিং, যার ফলে মুখের জিহ্বায় যে আলসার হয়েছে-এটা আরও বাড়ছে। আপনারা জানেন, এই ধরনের রোগগুলো দ্রুত বাড়তে থাকে। আর্থারাইটিস, ফ্রোজেন সোল্ডার প্রভৃতি রোগে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটেছে বলে।’

ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের ব্যাপারটা দলের সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, পরিবারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করেছে। আমি বুঝতে পারি না দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই আচরণের উদ্দেশ্যটা কী? তাকে কি এই আচরণের মধ্য দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া? রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কি তাকে একেবারে জীবন অবসানের চেষ্টা করা। এই প্রশ্নগুলো তো মানুষের মধ্যে এসে যাচ্ছে।  আপনারা দয়া করে এই বিষয়টাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে জনগণের সামনে, সরকারের সামনে তুলে ধরেন। যাতে করে এই নেত্রী, তিনি জনগণের নেত্রী, তিনি ডিজার্ভ করে ভালো ট্রিটমেন্ট যেন পান। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা শিগগিরই তার মুক্তি চাই, যে মুক্তিটা তার প্রাপ্য। আজকে সরকার তার জামিনে প্রত্যেকটা বাধার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সরকার এই বাধাটা সৃষ্টি করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, ৩ সাপ্তাহ আগে ম্যাডামের টুথ গ্রান্ডিং করা হয়েছিল। তার দাঁতের সার্পনেসটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত ১৫ দিন যাবত অর্থাৎ গত ৬-৭ তারিখে রেফার্ড দেওয়া হয়েছিল ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে কল করা হয়েছিল। তারা গত পরশু দিন উনাকে দেখেছেন।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘এ-ব্লক থেকে কেবিন ব্লকে যেতে যদি ডাক্তার কল দিলে ১০দিন সময় লাগে, তাহলে এই ধরনের রোগীর প্রতি এই ধরনের আচরণ এটা কী ইন্ডিকেট করে। ডেন্টাল ডিপার্টমেন্ট এ-ব্লকের চার তলায়। সেখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, আপনারা সাংবাদিকরা একবার ঘুরে আসলে দেখতে পারেন যে, সত্যিকার অর্থে  কী আছে। ম্যাডামের মতো ৭৫ বছরে নেত্রীর যদি কোনো না কোনো সমস্যা হলে জরুরিভাবে ম্যানেজ করবে কিভাবে। সেখানে কি সুযোগ-সুবিধা আছে?’ বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার দাঁতে সুচিকিসার আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

Comment here