নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ‘গুলিতে ঝাঁঝরা’ দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহষ্পতিবার ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- নাজমুল ইসলাম ও শাহীন ওরফে মোটা শাহিন। তারা হাতিরঝিল থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, নিহতরা ছিনতাইকারী দলের সদস্য। চক্রটি দীর্ঘদিন রাজধানীতে ছিনতাই করে আসছিল। তারা যাত্রী সেজে সিএনজি ভাড়া করেন। অনেক সময় সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে শেয়ারে সিএনজি ভাড়া নেন। তারপর সুযোগ বুঝে চালক বা যাত্রীকে জিম্মি করে মারধর করেন। ভুত্তভোগীর কাছ থেকে সবকিছু ছিনতাই করে চোখ বেঁধে ফেলে রাখেন তারা। চক্রটি ‘গামছা পার্টি’ হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ আরও দাবি করে, নিহত নাজমুল ও শাহীন ছিনতাইসহ চারটি খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় একটি, খিলক্ষেত থানায় দুটি এবং ভাটারা থানায় একটি মামলা তদন্তাধীন। লাশের পাশ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সিএনজি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদিকুর রহমান উল্লেখ করেন- ৩২ বছর বয়সী যুবকের (নাজমুল) বুকের মাঝখানে একটি, পেটে চারটি ও পিঠে চারটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। আর ৩০ বছর বয়সী যুবকের (শাহীন) বুকে তিনটি, ডান বগলে একটি, ডান হাতে দুটি, বাম হাতে দুটি এবং পিঠে একটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। দৃশ্যত গুলির চিহ্ন হলেও প্রতিবেদনে বলা হয়, আঘাতজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। সুরতহাল প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে সকাল ৭টায় দুটি লাশ উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ছিনতাইয়ের ধারাবাহিক তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানতে পারে- খিলক্ষেতের ডুমনি কালীমন্দির আহবপাড়া এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা অবস্থান করছে। খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার ভোররাতে হাতিরঝিল থানা পুলিশ খিলক্ষেত থানার ৩০০ ফিট সড়ক এলাকায় অভিযানে যায়। অভিযানের সময় নিহতরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে ছিনতাই চক্রের নেতা মোটা শাহীন ও নাজমুল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’ তারা ছিনতাইসহ চারটি খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলেও ডিসি মাসুদুর রহমান জানান।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘নিহত নাজমুল ও মোটা শাহীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ছিনতাই কাজ করতে গিয়ে মানুষ খুন করতেন। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরে পাঁচটি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি ফ্লাইওভারে ছিনতাই ও ছিনতাই কাজ করতে গিয়ে তারা কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটায়। সেই চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং তাদের বক্তব্যে উঠে আসে যে, নিহতরা একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। চক্রটি ‘গামছা পার্টি’ নামে পরিচিত। তাদের বক্তব্যে এই নাজমুল ও মোটা শাহীনের নাম উঠে আসে।’
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে, তারা সিএনজি ব্যবহারে ছিনতাই কাজ করছে। এরপর গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে জীবন নামে একজনকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জীবন জানায়, জব্দ সিএনজি দিয়ে তাদের এই দুজন সহযোগী ৩০০ ফিট এলাকায় ছিনতাই কাজে বেরিয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের হাতিরঝিল থানা পুলিশের একটি টহল টিম সেখানে চেকপোস্ট বাসায়। সেখানে চেকপোস্ট চলাকালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে পিস্তল থেকে গুলি ছোড়ে। তখন পুলিশও গুলি ছুড়লে ওই দুজন নিহত হয়। এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
Comment here