ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক দল গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির ৬৫ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
অজ্ঞান পার্টির একজন সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খেজুরের ভেতরে ওষুধের গুড়ো ভরে একজনের কাছে রাখা হয়। তারপর মহাজন বলে দেয় একজনকে টার্গেট করে আমাদের বলে তার পিছু নিতে, সে যে গাড়িতে উঠবে সেই গাড়িতে উঠি আমরা।’
জানা যায়, স্নায়ুর চাপ কমানো, অনিদ্রাসহ নানা সমস্যায় ব্যবহৃত চেতনাশক ট্যাবলেট সংগ্রহ করা হয় অবৈধ উপায়ে। তারপর সেগুলোকে গুড়ো করে মিশিয়ে দেওয়া হয় খেজুরের সঙ্গে। কখনো চেতনানাশক ওষুধের সঙ্গে কাগজ পোড়ানো ছাই মিশিয়ে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের হালুয়া। খুব সাধারণ এই কৌশলই অনেক সময় হয়ে দাঁড়ায় মানুষের মৃত্যুর কারণ। মানুষের থেকে টাকা ও মালামাল হাতিয়ে নিতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা এই পন্থা বেছে নিয়েছে।
আজ শনিবার বেলা ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম। তিনি জানান, ঈদের আগে এসব চক্রের তৎপরতা বাড়বে এমন তথ্য পেয়েছেন তারা। যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় এরা বারবার জামিনে বের হয়ে যাচ্ছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেট-শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে সখ্যতা স্থাপন করে। এরপর তাদের অপর সদস্যরা টার্গেট করা ব্যক্তি ও তাদের সদস্যকে ট্যাবলেট মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্যের আমন্ত্রণ জানান। টার্গেট করা ব্যক্তি রাজি হলে ট্যাবলেট মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য তাকে খাওয়ায় এবং নিজেদের সদস্যরা সাধারণ খাবার গ্রহণ করে। খাদ্য দ্রব্য গ্রহণের পর টার্গেট করা ব্যক্তি অচেতন হলে তারা তার মূল্যবান দ্রব্যাদি নিয়ে দ্রুত চলে যান। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে খেজুর, চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, পান, ক্রিম জাতীয় বিস্কিট ইত্যাদি ব্যবহার করে।
এ ছাড়া তারা অভিনব কৌশল হিসেবে সাধারণ মানুষকে অজ্ঞান করে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফোন করে বলে, ‘সে আমাদের নিকট আটক আছে। তাকে মুক্ত করতে বিকাশ বা অন্যকোনো মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে।’ আত্মীয়-স্বজন ভিকটিমকে মুক্ত করতে টাকা পাঠালে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা টাকা নিয়ে মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
Comment here