রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা লোকাল বাসগুলো,সংক্রমণের ঝুঁকি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা লোকাল বাসগুলো,সংক্রমণের ঝুঁকি

মোঃআলাউদ্দীন মন্ড :  সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও দীর্ঘ ৬৬ দিন পর চালু হয়েছে গণপরিবহন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা থাকলেও তা মানছে না কেউ। বিশেষ করে আন্ত:জেলায় যাতাযাত করা গণপরিবহনগুলোতে। স্বাস্থবিধি মানার ক্ষেত্রে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিশাল জনগোষ্ঠি।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমশ বেড়েছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। ঢিলেঢালাভাবে রাজশাহীতে সোমাবার সকাল থেকে চলাচল শুরু করেছে গণপরিবহন। এসব গণপরিবহনকে স্বাস্থবিধি মেনে চলাচল করতে নির্দেশ দেয়া হয়ছে। কিন্তু তা হচ্ছে না। গাড়ির চালক থেকে শুরু যাত্রীরা কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
রাজশাহী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশের উপজেলাগুলো থেকে রাজশাহী আসছে বাস। রাজশাহী থেকেও ছেড়ে যাচ্ছে কাছে ও দূরপাল্লার বাস। বাস টার্মিনালে যাত্রীদের বেশ ভিড়।
টিকেট কাউন্টারগুলোতে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে টিকেট বিক্রির কথা থাকলেও বেশি ভাগ ক্ষেত্রে তা কাজে আসছে না। সরকারি নির্দেশনায় বাসে উঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করার কথা। তবে অনেক বাস কাউন্টারে নামে মাত্র স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। এসব স্যানিটাইজার ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না আগত যাত্রীরা। যাত্রীদের ওঠানোর আগে তার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার যন্ত্র নেই অনেক বাসে।
নির্দেশনায় যাত্রার শুরুতে এবং শেষে।
 বাধ্যতামূলকভাবে গাড়ির অভ্যন্তরভাগসহ পুরো গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করার কথা থাকলেও কোথাও তার বাস্তবায় চোখে পড়েনি। টার্মিনালে বাস আসার সঙ্গে সঙ্গেই ফের নতুন করে যাত্রী তুলে আবার রওনা দিচ্ছে চালকরা। এমনকি নেমে যাওয়া যাত্রীর বসা সিটও পরিস্কার করছে না তারা। এক সিট পরপর যাত্রী বসানো হলেও ওঠা-নামার সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে না। এমন কি বাসস্ট্যান্ড ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী উঠা-নামা করাতে দেখা গেছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাক-বিতন্ডা জড়াতে দেখা গেছে অনেক বাসশ্রমিককে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো হলো- স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বাস টার্মিনালে কোনোভাবেই ভিড় করা যাবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা গাড়ির জন্য লাইনে দাঁড়াবেন এবং টিকিট কাটবেন। স্টেশনে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাসে কোনও যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না। বাসের সব সিটে যাত্রী নেয়া যাবে না। ২৫- ৩০ শতাংশ সিট খালি রাখতে হবে। পরিবারের সদস্য হলে পাশের সিটে বসানো যাবে অন্যথায় নয়। যাত্রী, চালক, সহকারী, কাউন্টারের কর্মী সবার জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। ট্রিপের শুরুতে এবং শেষে বাধ্যতামূলকভাবে গাড়ির অভ্যন্তরভাগসহ পুরো গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। যাত্রী ওঠা-নামার সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীদের হাত ব্যাগ, মালামাল জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফলে এসব নির্দেশনা বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
তবে এসব নিদের্শনা মানার কোন বালাই নেই।একজন  বাসচালক  জানান, যাত্রী নামিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা তড়িঘড়ি করে ওঠে যাচ্ছে। এতে আমরা বাস পরিস্কার করার সময় পাচ্ছি না। অনেক দিন পর বাস নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। এখন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হয়। তারপরও আমারা সবাইকে সর্তক করছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করতে বলছি। মাস্ক না পড়লে বাসে ওঠতে দেই না।
রাজশাহী থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন জসিম। অভিযোগ জানিয়ে তিনি জানান, বাসের সিটগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে না। একজন যাত্রী নামানোর পর সেই সিটে নতুন করে আরেকজনকে বসানো হয়। অনেক দিন পর বাস রাস্তায় নেমেছে। আগের ময়লা সিটের বাসগুলো এখনো দেখা যাচ্ছে। এর ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই বিষয়ে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দূরপাল্লার ও আন্তজেলা বাস চলাচল সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। অন্য স্বাভাবিক সময়ে রাজশাহী থেকে ২৫০ টি বাস চলাচল করলেও এখন ১০০ থেকে ১৫০ টি বাস চলাচল করছে।
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আমরা পর্যাপ্ত চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। এখানে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া আছে। বাস চালকদের নিদের্শনাও দেয়া আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যে এইসব নিয়মে আমরা অভ্যস্থ হয়ে যাবো।

Comment here