মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল রাজশাহী : রাজশাহীর বাঘায় গেল কয়েক বছর যাবৎ দিনের আলোয় খনন করা হতো পুকুর। এ বছর লোক চক্ষুর আড়াল করে রাতের আঁধারেই চলছে অবৈধ পুকুর খননের কাজ। আর এই পুকুর খননের মাটি পরিবহন করতে পাকা রাস্তা হচ্ছে নষ্ট। কমে যাচ্ছে ফসলের আবাদি জমি। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ব্যাপক হারে মারা যাচ্ছে এ এলাকার প্রধান ফসল আমের গাছ। আর এই পুকুর খনন কে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তেঁথুলিয়া কামার পাড়া মসজিদ থেকে পশ্চিমে রয়েছে একটি ক্যানাল। পশ্চিম অঞ্চলের পানি বের হওয়ার জন্য ক্যানেলে মাত্র একটি সাঁকো রয়েছে। আর এই ক্যানালের মুখ বন্ধ করতে কয়েকদিন যাবৎ চলছে পুকুর খনন। প্রতি বছরই প্রশাসনের আড়ালে স্থানীয় লোকজনকে মেনেজ করে মহোৎসবে খনন করা হয় অবৈধ পুকুর। জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’—এমন সরকারি নির্দেশনা ও হাই কোর্টের রিট থাকলেও উপজেলার প্রায় প্রতিটি বিলে অবৈধ পুকুর খনন করে ছয়লাপ করেছে অসাধু পুকুর ব্যবসয়ীরা। এতে করে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।এক শ্রেণির পুকুর ব্যবসায়ীরা অসহায় গরীব কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে ও লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছে। আর কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের ফসলি জমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন এক শ্রেণির প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ীরা। আর এই মাটি খেকো পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারী জমিও। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার তেঁথুলিয়া কামার পাড়ার পশ্চিমে আড়পাড়া যাওয়ার পথে অচিনতলা নামক স্থানে ক্যানালের সাঁকোর মুখ বন্ধ করে চলছে পুকুর খনন। এ বিষয়ে কন্টাক্টটার (ভেকু) মান্নাফ বলেন, এই জমি হাজী আলাল উদ্দিন (তেপুকুরিয়া বাটা ব্রিকস) মালিক সম্প্রতি ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে পূর্বের মালিকের কাছ থেকে ক্রয় করেছে। এখানে কিছু খাস জমিও আছে আর পুকুর কাটার অনুমতিও আছে। কে অনুমতি দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিসি সাহেব। এছাড়াও আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা সহ থানা এবং বাঘা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক নুরুজ্জামান এর নাম উল্লেখ করে বলেন সকলকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করছি। আর মাটি আলাল হাজী তার ইট ভাটায় নিচ্ছে।
তবে তিনি বাঘা রিপোটার্স ক্লাবের সাংবাদিকদের ডিসির অনুমতি পত্র নিয়ে আসি বলে চলে গেলে আর সেখানে ফিরে আসেন নি। মুঠোফোনে ইট ভাটার মালিক হাজী আলাউদ্দিন বলেন, আমি আমার ইট ভাটায় মাটি ব্যাবহারের জন্য অনুমতি নিয়েছি। পুকুর বা জায়গাটির মালিক জামাল নামের এক ব্যাক্তি, আমার না। জমির মালিক সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছে আমি শুধু আমার নিজ খরচে মাটি নিয়ে আসছি। এতে করে আমার খরচে তার পুকুর হয়ে যাচ্ছে। মাটি কাটার বিষয়ে ইউএনও সাহেব কে অবহিত করেছি এবং বাঘা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কে এলইডি টিভি দিয়ে ম্যানেজ করেছি। মুখে বললেও তিনি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোন অনুমতি পত্র সাংবাদিক দের দেখাতে পারেন নি। বরং তিনি বারংবার চা খাওয়ার দাওয়াত দেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান,আমি জানিনা তবে লোকমুখে শুনেছি পুকুর খনন করা হচ্ছে। এটি পানি নামার একমাত্র ক্যানাল, পুকুর খনন করার জন্য যদি এই ক্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এলাকার অনেক ক্ষতি হবে। আড়পাড়া, হরিণা, রায়পুর, ফতিয়ারদাঁড়, তেঁথুলিয়া সহ আরও অনেক গ্রামে বৃষ্টির পানিতে সৃৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা, মানুষ হবে পানি বন্দী, মাঠে হবে না ফসল, মারা যাবে আমের গাছ। বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক বলেন, পুকুর খননের বিষয়টি আমার জানা নেই। আর অচিনতলা নামের জায়গাটি আমার ইউনিয়নের কিনা জানতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো,শাহিন রেজা বলেন, পুকুর খননের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই, কোন অভিযোগও পাইনি। তবে ঘটনার সত্যতা পেলে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
Comment here