রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস জীবননগরের ভূমিহীন-গৃহহীন মমতাজ দম্পত্তির - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস জীবননগরের ভূমিহীন-গৃহহীন মমতাজ দম্পত্তির

জাহিদ  হাসান জীবননগর(চুয়াডাঙ্গা): চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার চ্যাংখালী-গোয়ালপাড়া সড়কের পাশে পতিত জমিতে
২১ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস অসহায় দরিদ্র ও ভুমিহীন নুর মোহাম্মদ-মমতাজ
দম্পত্তির। দিনের বেলায় একটু স্বস্তি পেলেও রাতে ঝুপড়ি ঘরে সন্তান-সন্ততি
নিয়ে শুইতে গেলে শঙ্কায় থাকতে হয় তাদেও, কখন জানি ঘর ভেঙ্গে পড়ে কিংবা
ঝড়-বৃষ্টিতে ঘর উড়ে যায়। ঝুপড়ি ঘরের কারণে তাদের দু’ছেলে সন্তান বিবাহ
যোগ্য ভবিষ্যতে তাদের বিয়ে দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে তাদের শঙ্কার যেন শেষ
নেই।

পার্শ্ববর্তী শাখারিয়া গ্রামের বাসিন্দা এলেম মিয়াসহ(৪৫) এলাকার একাধিক
ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়,নুর মোহাম্মদ(৬৪)-মমতাজ বেগম(৫৫)
দম্পত্তি চ্যাংখালী-গোয়ালপাড়া সড়কের পাশে পতিত জমিতে দীর্ঘ ২১-২২ বছর ধরে
তারা একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন। তার দু’টি ছেলে সন্তান রয়েছে।
ঝুপড়ি ঘরও ভগ্নদশা। এ ছাড়া তো তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। ঝুপড়ি ঘরে
বসবাসের কারণে তাদের দু’ছেলের বিয়ের বয়স হলে ভবিষ্যতে তাদের বিয়ে নিয়েও
শঙ্কায় রয়েছেন পরিবারটি।

অসুস্থ্য নুর মোহাম্মদ বলেন,এক সময় উপজেলা ব্যাপী আমার ভ্যানওয়ালা নুরু
হিসাবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। বাবা-মায়ের যে ভিটেমাটি পেয়েছিলাম তাও বিক্রি
করে ঋণ পরিশোধ করি। পরে ২০০০ সালেরও আগে থেকে পরিত্যক্ত সরকারী এই
রাস্তার জমিতে বসবাস শুরু করি। আমি বর্তমানে মারাত্মক অসুস্থ্য ভ্যানও
চালাতে পারি না,আবার ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে পারি না। পার্শ্ববর্তী মুরগী
ফার্ম পাহারা দিয়ে যা পাই তা দিয়েই সংসার চলে আমার।
সরজমিনে নুর মোহাম্মদের স্ত্রী মমতাজ বেগমকে জীর্ণ-শীর্ণ শরীর আর পরনে
ছেড়া কাপড়ে দেখা যায়। তার দাবী দীর্ঘদিন ধরে আমরা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করলেও
কেউ আমাদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসেনি। একদিকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই
রোগাক্রান্ত। অন্যদিকে আমাদের শিশু দু’সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তা। তাদের
এখনও পর্যন্ত মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পারলাম না। লোকজনের কাছ থেকে
বাঁশ চেয়ে টিন-পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘরে থাকার কারণে বড় ছেলে সাইফুলের সাথে
কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চাচ্ছে না। এলাকায় তেমন কোন বসতি নেই। ঝুপড়ি ঘরে আমরা
রাতের বেলা নিরাপত্তাহীনতায় থাকি। বর্ষা মওসুমে সবচেয়ে বেশী বিপদে থাকি।
ঝড় ঝাপটা এলেই বুক কেপে ওঠে কখন জানি ঘর ভেঙ্গে মাথায় পড়ে কিংবা ঝড়ে ঘর
উড়ে যায়। বর্ষার দিনগুলো ভয়ে আর নির্ঘুম রাতে কাটে অধিকাংশ সময়ই। বর্ষার
সময় ঘর দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ে। সে আমাদের ঘুমের পরিবর্তে বসে রাত কাটে।
ছোট ছেলে আশাফুল হক লেখাপড়া করে তার বইপত্রও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়।
বর্তমানে কনকনে শীতে জীবন কাহিল অবস্থা হয়ে যায়।
সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা পান না কি না জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ
বলেন,সরকারের কোন সাহায্য আমাদের কপালে জোঁটে না। মানুষের কাছে শুনি শেখ
হাসিনা সরকার নাকি গরীব মানুষকে ঘর ও চাল দেয়। কই আমরা তো কিছুই পেলাম
না। আমাদের দুরাবস্থা কি কারো চোখে পড়ে না। নুর মোহাম্মদ-মমতাজ বেগম
দম্পত্তির বর্তমানে কখনও খেয়ে,আবার কখনও না খেয়ে দিন কাটে।
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাবুল ইসলাম মিল্টন মোল্যা বলেন,আমি
সবেমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা পেলাম। তবে নুর মোহাম্মদ-মমতাজ বেগম
দম্পত্তি অনেক দিন ধরে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। সরকারী ঘর
বরাদ্দ আসলেই আমি তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি সরকারী ঘর দেয়ার
ব্যবস্থা করব। ইতিমধ্যেই অন্যান্য সহযোগীতা তাদেরকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন,আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার
হিসাবে যোগদানের প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বার-কাউন্সিলরদের ভুমিহীন,ঘরহীন
পরিবারের তালিকা দিতে বলেছি। এ বছর ঘরের তালিকা হয়ে গেছে। নুর
মোহাম্মদ-মমতাজ বেগম দম্পত্তি পরিবারের ব্যাপারটি আমি দেখব এবং তারা যাতে
আগামীতে সরকারী ঘর বরাদ্দ পায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তারা
যেন একটি লিখিত আবেদন দিয়ে রাখেন।

Comment here