রোহিঙ্গা এনআরসি পানিবণ্টনে গুরুত্ব - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

রোহিঙ্গা এনআরসি পানিবণ্টনে গুরুত্ব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : চার দিনের সরকারি সফরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলা হচ্ছে, সম্পর্কোন্নয়নই এই সফরের মূল লক্ষ্য। তা সত্ত্বেও দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, আসামের নাগরিকপঞ্জি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনসহ অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয় ঠাঁই পাবে। তিস্তার পানিবণ্টন আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

সফরে ১৬টির মতো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে অংশ নেবেন।

বর্তমান মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে যাচ্ছে। অবশ্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সাইডলাইনে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানের জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। আর এ বছরের জুনে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এ দুই নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি আসামের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বাংলাদেশে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও নিউইয়র্ক বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন। এবারের সফরের আলোচনার এজেন্ডায় তিস্তা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টিও উঠে আসবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার যেন ফিরিয়ে নেয়, সে ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা চাইবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মার্চে ঢাকায় আসছেন মোদি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী বছরের মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন বলে জানা গেছে। নিউইয়র্কের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মার্চে বাংলাদেশ সফর করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সফরসূচি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ওই দিন দুপুর ১টায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। ফোরামে তিনি মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হওয়াসহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি তুলে ধরবেন। রাতে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং তার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন। পর দিন শুক্রবার তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া এদিন তিনি ভারতের তিনটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন। শনিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এর পর হায়দরাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দুই নেতা একান্ত বৈঠকও করবেন। তাদের উপস্থিতিতে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে ১৬টির মতো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যোগাযোগ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে এই চুক্তি ও সমঝোতাগুলো হবে। তবে শেষ মুহূর্তে কিছু সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। এবারের সফরে আকাশ সেবা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দর ব্যবহারসংক্রান্ত একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৬টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় ফেরেন। বিমানবন্দরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মো. মুহিবুল হক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী গণভবনে পৌঁছলে আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, রিয়াজুল কবীর কাওসার, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক খান, আজিজুল হক রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার নিউইয়র্ক থেকে রওনা দিয়ে আবুধাবি হয়ে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

Comment here