র‌্যাবের পোশাকে অপহরণচেষ্টা, পুলিশ দেখে ৩ লাখ টাকা নিয়ে দৌড় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

র‌্যাবের পোশাকে অপহরণচেষ্টা, পুলিশ দেখে ৩ লাখ টাকা নিয়ে দৌড়

জনি রায়হান : রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে বাসে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন মাহমুদুল হাসান। আজ শনিবার বেলা ১১টায় ‘অনাবিল’ পরিবহনের বাসটি শনির আখড়া ফুটওভার ব্রিজের নিচে আসলে র‌্যাবের জ্যাকেট পরা পাঁচ-ছয়জন গাড়িতে ওঠেন। তারা নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে মাহমুদুলকে জোর করে বাস থেকে নামায়।

পরে মাহমুদুলের কাছে থাকা মোবাইল এবং তিন লাখ টাকার একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেন ওই র‌্যাব পরিচয় দেওয়া ওই দলের সদস্যরা। এরপর তাকে জোর করে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেটকারে তোলেন তারা। প্রাইভেটকারে ওঠা পর্যন্ত মাহমদুল বারবার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। বাসের অন্য যাত্রী এবং পথচারীরা সবাই ঘটনাটি শুধুমাত্র দেখছিলেন, কেউ এগিয়ে আসেনি।

মাহমুদুলকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যখন তারা রওনা হচ্ছিলেন, তখন পাশে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন উবারচালক এসে দাঁড়িয়ে যান সামনে। র‌্যাবের পোশাক পরা ওই ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চান তিনি। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশেই দায়িত্বে ছিলেন ট্র্যাফিক পুলিশের কনস্টেবল মো. মকবুল। গাড়ির ভেতরের চিৎকার শুনে দ্রুত তিনিও এগিয়ে আসেন। আর তখনি র‌্যাবের জ্যাকেট পরা ওই দলটির সদস্যরা গাড়ির দরজা খুলে পালিয়ে যান। গাড়ির চালকও প্রাইভেটকারটি ফেলে পালিয়ে যান।

এরপর ট্র্যাফিক পুলিশেরর সহায়তায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ প্রাইভেটকার  আটকসহ মাহমুদুল হাসানকে উদ্ধার করেন। র‌্যাবের পোশাক পরে যাত্রবাহী বাসের ভেতর থেকে প্রকাশ্যে এক যুবককে অপহরণের হাত থেকে এভাবেই বেঁচে যান। তবে তার তিন লাখ টাকা নিয়ে গেছে ওই দলটির সদস্যরা।

অপহরণের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মাহমুদুল হাসান, তার ভাই এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেই ট্র্যাফিক পুলিশ কনস্টেবল দৈনিক মুক্ত আওয়াজ অনলাইনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

‘অল্পের জন্য বেঁচে গেছি, লাঠি দিয়ে পেটাইছে’ 

এ ঘটনায় মাহমুদুল হাসান গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে বাস থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামানো হয়েছে। এরপর বাস থেকে নামিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘তারা আমাকে মারতে মারতে বাস থেকে নামাইছে। আমারে পিস্তল দেখাইছে। আমি কী করেছি জানতে চাইলে তারা আমাকে বলে যে, আমার নামে অভিযোগ আছে। অল্পের জন্য আজ আমাকে নিয়ে যেতে পারে নাই। কিন্তু তারা আমার দুটি মোবাইল ফোন ও ব্যাগে থাকা তিন লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে।’

মাহমুদুল আরও বলেন, ‘তারা প্রাইভেটকারে তুলেই আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিল। ওই লাঠিটা পুলিশের লাঠির মতো। আমার শরীরে এখন প্রচণ্ড ব্যথা।’

মাহমুদুল হাসানের ভাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা হয়তোবা বাসে ওঠার আগে থেকেই আমার ভাইকে নজরদারি করছিলেন। তারা র‌্যাবের জ্যাকেট পরা ছিল। তাই তাদের কেউ সন্দেহ করার সাহস পায়নি। এরপরে আবার একজন নাকি পিস্তলও বের করে হাতে রেখেছিল।’

মাহমুদুলের ভাই আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে যখন জোর করে ওই প্রাইভেটকারে তোলা হচ্ছিল, তখন লিটন নামের এক উবারের চালক বাইক নিয়ে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ায়। এত মানুষের মধ্যে কেবল লিটন নামের ওই ব্যক্তিই সাহস করে জিজ্ঞাসা করে তারা আসল র‌্যাব কি না? আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ কনস্টেবলও দৌড়ে না আসলে হয়তোবা আমার ভাইয়ের সাথে অন্য কিছু ঘটে যেত।’

ফেলে যাওয়া গাড়ির মালিক কে?

মাহমুদুলকে অপহরণ করতে এসে ফেলে যাওয়া সেই প্রাইভেটকারের মালিক আসলে কে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

দৈনিক মুক্ত আওয়াজ অনলাইন’র হাতে আসা ওই প্রাইভেটকারের কাগজপত্র অনুযায়ী গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-২১…। বিআরটিএ’তে জমা দেওয়া গাড়ির ট্যাক্স টোকেনে গাড়ির মালিকের নাম দেওয়া আছে মো. ইসমাইল হোসেন খান। তবে গাড়ির মালিকের নাম পরিবর্তনের একটি কাগজও ওই গাড়িতে পাওয়া যায়। সেই কাগজে নতুন মালিকের নাম দেওয়া আছে মো. মাকসুদুর রহমান। আর ঠিকানার স্থানে দেওয়া আছে রূপগঞ্জের খান পাড়া নামক এলাকার একটি বাড়ির নম্বর। ওই গাড়ির ফিটনেস সনদেও মালিক হিসেবে মো. মাকসুদুর রহমানের নাম রয়েছে।

ফেলে যাওয়া প্রাইভেটকার থেকে উদ্ধার করা হয় পরিচয়পত্রটি

 

গাড়িতে পাওয়া পরিচয়পত্রের ব্যক্তিটি কে?  

অপরাধীদের ফেলে যাওয়া সেই প্রাইভেটকারটি তল্লাশি করে কিছু কাগজপত্রের সঙ্গে একটি অফিসের পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। ওই পরিচয়পত্রটি এফএজি ইভেন্টম্যানেজমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। পরিচয়পত্রের পেছেন অফিসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মিরপুরের একটি বাসার। আর জরুরি যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই।

তবে পরিচয়পত্রে মো. আশিক দেওয়ান নামের একজনের নাম ও ছবি দেওয়া আছে। আর পদবীতে দেওয়া আছে মার্কেটিং ম্যানেজার।

ওই পরিচয়পত্রের পেছনে থাকা নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের কর্মচারী হৃদয় হোসেন জনি নামের একজন ফোনটি রিসিভ করেন। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে তার কাছে কাছে জানতে চাওয়া হয় পরিচয়পত্রের নাম ও ছবিধারী আশিক দেওয়ান আপনার পরিচিত না হলে কেন আপনার মোবাইল নম্বর ওই কার্ডে ব্যবহার করলেন-এমন প্রশ্নে হৃদয় হোসেন বলেন, ‘আশিক আমার বন্ধু। তবে কিছু দিন আগে থেকে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।’

ইভেন্টম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু জানেন কি না? জানতে চাইলে হৃদয় হোসেন বলেন, ‘আসলে আমরা তিন বন্ধু মিলে একটা ইভেন্টম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খোলা হয়নি, হয়তো আশিক নিজে নিজেই এই আইডিকার্ডটি বানিয়েছিল।’

আশিকের বর্তমান ঠিকানা বা কাজকর্ম সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলেও জানান হৃদয়।

পুলিশের ভাষ্য

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইবতেখার আহমেদ দৈনিক মুক্ত আওয়াজ অনলাইনকে বলেন, ‘ভিকটিমের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় আজ একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামিরা অজ্ঞাতনামা। ঘটনাটির তদন্তও শুরু করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comment here